চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। নগরে সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে বায়েজিদ, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালী, আকবর শাহ ও পাহাড়তলী থানায়। ওসব এলাকার ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণরূপে এবং ৯৫টি পাহাড়ের আংশিক কাটা হয়েছে। শুধুমাত্র পাঁচলাইশ এলাকায় পাহাড় কাটা হয়েছে ৭৪ শতাংশ। এছাড়া ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামে ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক দুই বর্গকিলোমিটারে নেমে আসে।
১৯৮৩ সালে সরকারি আদেশ ছিল চট্টগ্রামের কোথাও কোন পাহাড় কাটা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল- জাতীয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না। উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদেশ জারি করেছিলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে কোন পাহাড় কাটা যাবে না। অথচ সরকারের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে পাহাড় কাটা হয়েছে।
গত রোববার (১১ জুন) পর্যটন মোটেল সৈকতের সাঙ্গু হলে নগরীর পাহাড় কাটা রোধে মতবিনিময় সভায় কথাগুলো উঠে এসেছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফ্রম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ফোরাম ফর প্ল্যান চট্টগ্রাম (এফসি) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
১৫ টি পাহাড় কেটে নগরের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করে সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। এই পাহাড় কাটার জন্য সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। ২০১৫-২০১৬ সালে এই সড়ক নির্মাণ শুরু হয়।
এ প্রসঙ্গে পাহাড় না কেটেও বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড করা যেত বলে দাবি করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বেশ উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে হওয়া রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যাই। এটা (লিংক রোড) এমন কোনো উঁচু পাহাড় ছিল না। একটু খেয়াল করলে সেখানে পাহাড় না কেটেও রাস্তা করা যেত। ব্যক্তির উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি।
মতবিনিময় সভায় পাহাড় রক্ষা করার জন্য নানা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, পাহাড় কাটা রোধে ২০০৭ সালের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন, পাহাড়গুলোর বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে একটি জরিপ পরিচালনা, পাহাড় কাটা রোধে একটি হটলাইন চালু করা, আর কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে পাহাড় না কাটা, পাহাড় কেটে বাড়ি বা স্থাপনার কোনো পরিকল্পনায় সিডিএ অনুমোদন দেবে না মর্মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া, আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণ অনতিবিলম্বে বন্ধ করা, পাহাড় কাটা রোধে ও পাহাড়ের সুরক্ষায় সমন্বয় সেল বা আলাদা ইনফোর্সমেন্ট সেল বা টিম গঠন, পাহাড় রয়েছে এমন সকল ওয়ার্ডের জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করা এবং পাহাড়, খাল, ছড়া রয়েছে এসব জায়গায় বিদ্যুৎ,পানিসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা বন্ধ করা।
পাহাড় প্রকৃতির সৃষ্টি, পাহাড় গড়া যায় না। অথচ পাহাড়কে ধ্বংস করছে দখলদাররা। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের। পাহাড় রক্ষায় দরকার সাহসী পদক্ষেপ।
এ মুহূর্তের সংবাদ