আনোয়ারা-কর্ণফুলী
সুমন শাহ্, আনোয়ারা :
প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচের বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে দ্রুতগতিতে চলছে আনোয়ারা অংশের সংযোগ সড়কের কাজ। কর্ণফুলীর শিকলবাহা ওয়াই জংশন (ক্রসিং) থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত সড়কটি ছয় লাইনে প্রশস্ত হচ্ছে। বর্তমানে দুই লাইনের ১৮ ফুটের সড়কটি হবে ১৬০ ফুট। সাড়ে ১১ কিলোমিটার এই সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ২৯৫ কোটি টাকা। মূলত কর্ণফুলীর তলদেশে বাস্তবায়নাধীন টানেলের সংযোগ সড়ক হিসাবে ব্যবহার ও গাড়ির অতিরিক্ত চাপ সামলানোর জন্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রশস্ত এই সড়ক তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সরু সড়কের কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় এই সড়কে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। কেইপিজেডের বিভিন্ন কলকারখানা ছুটি হলে যানজট স্থায়ী হয় ৩/৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। সড়ক ও টানেলকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার মানুষ। বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর চিত্র।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ পরিচালিত বঙ্গবন্ধু টানেলের চার লেইন ১০ কি.মি. সড়কের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। টানেলের টিউবসহ ৩০ মিটার প্রস্থ এ সড়কে কাফকো সেন্টার-কান্তিরহাট থেকে জেলেঘাটা পর্যন্ত ৭৫০ মিটার ফ্লাইওভার হবে। এ সড়কের দুপাশে ড্রেন নির্মাণের পাশাপাশি সবুজায়নের ব্যবস্থাও রয়েছে। ৩০ মিটার প্রস্থ সড়কের মূল অংশ হবে ২৪ মিটার। এ সড়কের প্রথম অংশ হতে ৪ মিটার উচ্চতা হয়ে পরবর্তীতে ২ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা থাকবে। সড়কটি তৈরিতে প্রথম লেয়ার বালি ফিলিং, পিভিডি ওয়াড, সেন্ট ফিলিং ও পাইলিং এর পর উপরের স্তরে জিও গ্রেড বেড বসানো হবে। এরপর একইভাবে ২য় স্তরের কাজও চলবে।
জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারায় গড়ে উঠেছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)। এ টানেলের মধ্য দিয়ে দু’পাড়ের সেতুবন্ধন রচিত হবে। শিল্পায়নের ফলে এ অঞ্চলের লাখো মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে।
টানেলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে টানেলের পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৫ কিলোমিটার ও পশ্চিম প্রান্তের ৭২৭ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলার যোগাযোগ রক্ষা পাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. এরফান আলী বলেন, বৈরাগ ও চাতরী ইউনিয়নের অংশের দিয়ে টানেল সড়কটি নির্মিত হচ্ছে। টালেন ও সড়ক নির্মিত হচ্ছে এটি আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। টানেল বাস্তবায়নকে ঘিরে বর্তমানে বদলে যাচ্ছে এ এলাকার চিত্র। যেখানে আগে দেখতাম একটি দু’টি পাকা ঘর, সেখানে এখন সবই পাকা ঘর নির্মিত হচ্ছে। উন্নত হচ্ছে মানুষের জীবন মানও। এটি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের মানুষের বদলে যাবে ভাগ্য। সহজ হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
চাতরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়াছিন হিরু বলেন, আনোয়ারা উপজেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার চাতরী চৌমুহনী। টালেন সংযোগ সড়ক ও ক্রসিং থেকে সিক্স লাইন সড়কের কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে এলাকার মানুষের ভাগ্য। বারশত ইউপি চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ূম শাহ্ বলেন, দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু টালেন বড় প্রকল্প। এটি কাজ শেষ হলে আনোয়ারার মানুষ উপকৃত হবে। তেমনি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে বারশত ইউনিয়নের মানুষদেরও। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বড় পর্যটন কেন্দ্র পারকি সমুদ্র সৈকত। সৈকতের পর্যটকদের জন্য যদি টালেন সড়ক ব্যবহারের জন্য একটি সংযোগ সড়ক করে দিলে ঢাকাগামী পর্যটকদের সহজ হবে সৈকতে আসা।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের মেগাপ্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু টালেন প্রকল্প। টানেলটি চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পর্যটন বা অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে আরো অনেক। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থাপিত শিল্পকারখানার পণ্য যেমন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া সহজ হবে। পাল্টে যাবে মানুষের ভাগ্য।