রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
সরকার ফসলের আবাদ বাড়াতে তাগিদ দিলেও মিরসরাইয়ে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চাষের অন্যতম অনুষদ পানির স্কিম। গত ১৫ বছরে ১৮টির মধ্যে ১৪টি পানির স্কিম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ধান ছাড়াও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। এছাড়া বাজার মূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়া কৃষি কাজে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে ফসল উৎপাদন বাড়াতে ২০১২-২০১৩ ও এর আগে মিরসরাইয়ের ১৬ ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভায় মোট ১৯টি পানির স্কিম দিয়েছিল বিএডিসি। ১৯টির মধ্যে একটি স্কিম ফেরৎ আসে। বর্তমানে ১৮টি পানির স্কিমের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ১৪টি। চালু রয়েছে মাত্র ৪টি। এগুলোর মধ্যে করেরহাট ইউনিয়নে ২টি, জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে একটি ও ধুম ইউনিয়নে একটি পানির স্কিম চালু রয়েছে। অথচ হিঙ্গুলী ও করেরহাট ইউনিয়নে ১৩টি পানি স্কিম দিয়েছিল বিএডিসি।
বন্ধ থাকার কারণ সর্ম্পকে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এর মিরসরাইয়ের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহেদ হাসান বলেন, কিছু পাম্প নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু পাম্প চালু করছে না স্কিম পরিচালকরা। উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারমূল্য কম ও কৃষকরা পেশা বদল করায় কৃষি কাজে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। এছাড়া সড়কের কাজ করতে গিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত ড্রেন ভেঙে ফেলেছে এলজিইডি।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যদিও এখনো আমন কাটা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। আমন কাটা শেষ হলেই বোরো আবাদ শুরু করবে কৃষক। বোরো আবাদ ছাড়াও কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষ হয়ে থাকে স্কিমে পানি দিয়ে।
এদিকে উপজেলার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো চাষে সেচের প্রয়োজন হয়। তাই খরচ বেশি পড়ে। কিন্তু খরচের তুলনায় ধানের বাজারমূল্য কম হওয়ায় তারা বোরো চাষ করছেন না।
কৃষকদের হিসেব মতে, এক শতক জমিতে বোরো চাষ করতে খরচ হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। কিন্তু এক শতকের ধান চাষ হয় মাত্র ১২ থেকে ১৫ কেজি। যার বাজারমূল্য মাত্র ১৮০-২০০ টাকা।
কৃষকরা আরো জানান, ১২০ শতক (স্থানীয় ভাষায় ১ কানি) জমি চাষ করতে খরচ হয় ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। এগুলোর মধ্যে বীজ রোপণ ৫ হাজার টাকা, জমি চাষ (৩ চাষ) ৭ হাজার টাকা, সেচ খরচ ৮ হাজার টাকা, রোপণ খরচ (১২ জন শ্রমিক) ৮৫০০ হাজার টাকা, ওষুধ ও নিরানী খরচ ৫ হাজার টাকা, ধানকাটা ও নেওয়া খরচ (১২ শ্রমিক) ৮৫০০ হাজার টাকা। মোট ১২০ শতক জমি চাষ করতে প্রায় ৪২ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ১২০ শতক জমিতে ধান হয় ৪৫ থেকে ৫০ মণ। যার বাজারমূল্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তাই কৃষকরা বোরো আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামে স্কিম পরিচালক মো. সুরুজ আলী জানান, ধানের বাজারমূল্য থেকে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা বোরো চাষ করছে না। তাই গত ৪ বছর ধরে তিনি স্কিম বন্ধ রেখেছেন। কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হলে তিনি পুনরায় স্কিম চালু করবেন। চার বছর আগে তিনি এক কানি (১২০ শতক) জমি চাষে পানি বাবদ ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিতেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রঘু নাথ নাহা জানান, বিএডিসির পানির স্কিম বন্ধ থাকলেও কৃষকরা মুহুরী প্রকল্প ও মহামায়া সেচ প্রকল্প ব্যবহার করে বোরো ও শীতকালীন সবজি চাষ করতে পারবে। এজন্য কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া বন্ধ স্কিমগুলো চালু বিষয়ে বুধবার যৌথ সভা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান জানান, বন্ধ স্কিমগুলো চালুর বিষয়ে কৃষি অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসিকে নিয়ে বুধবার যৌথ সভা করা হবে।