সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক
অবশেষে নীরবতা ভেঙে মুখ খুললেন ঢাকাই ছবির শীর্ষ তারকা শাকিব খান। চলচ্চিত্রের অপর শীর্ষ নায়িকা পরীমণি গ্রেফতারের ১০ দিনের মাথায় বিষয়টি নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা তুলে ধরলেন তিনি।
অন্যদিকে, কাঠগড়ায় তুললেন চলচ্চিত্র শিল্পীদের ‘কল্যাণে’ কাজ করা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাম্প্রতিক অবস্থান নিয়েও।
‘ধূমকেতু’ ছবির সহকর্মী পরী প্রসঙ্গে শাকিবের মন্তব্যটা এমন, ‘‘খেয়াল করছিলাম, অপেক্ষাও করছিলাম। প্রত্যাশা ছিল, বিপরীতে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গত কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থেকে শুক্রবার (১৩ আগস্ট) আদালতের নির্দেশে পরীমণিকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সহকর্মী হিসেবে যতদূর জানি, পরীমণি বাবা-মা হীন। তার বেড়ে ওঠা পারিবারিকভাবে আর পাঁচটা তরুণ-তরুণীর বেড়ে ওঠা, স্ট্রাগলে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। হয়তো সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে পরীমণি অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। ১০ আগস্ট আদালত চত্বরে পরীমণির শতবর্ষী নানা তার নাতনিকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন। করোনার এই ভয়াবহতাও আটকাতে পারেনি তার বৃদ্ধ নানাকে, রক্তকে উপেক্ষা করতে পারেনি রক্ত। কিন্তু সময় কী নিষ্ঠুর! পরীমণির সঙ্গে নাকি দেখাই হলো না বৃদ্ধ নানার। আদালত চত্বরেই পরীমণির নানাকে বলতে শুনেছি, ‘পরীমনি নিজের জন্য জীবনে কিছুই করেনি। সব মানুষের জন্য দান করে গেছে। আর এখন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।’’
১৪ আগস্ট দুপুরে ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড পেজে লেখা এক স্ট্যাটাসে শাকিব এ মন্তব্য করেন। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে লেখেন, ‘পরীমণির মামলা এখন বিচারাধীন। ওই বিষয়ে কিছু বলছি না। তিনি যে মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন, তার কী অপরাধ- সেটা বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। দেশের প্রচলিত আইন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে সঠিক বিচার হবে। কিন্তু তার আগে পরীমণির জীবন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেভাবে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, এটা সত্যি দুঃখজনক।’
আর শিল্পী সমিতি প্রসঙ্গে তো একেবারে বিস্ফোরক সাবেক এই শিল্পী নেতা। বলেন, ‘আরও দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমণিকে গ্রেফতারের পর তার প্রতি কোনও ধরণের সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে, দুঃসময়ে শিল্পীর পাশে না থেকে উল্টো তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। মুহূর্তেই পরীমণির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে! এ যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটে! সমিতির এই আচরণ সত্যিই খুব রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে বিবেকবান অনেক সিনিয়র জুনিয়র শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আক্ষেপ রয়েছে। শিল্পীর সাথে সংগঠনের এটি একটি অমানবিক আচরণ। প্রশ্ন থেকে যায়, এখনকার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তাহলে কাদের স্বার্থে?’
গ্রেফতারের ঘটনা আগেও হয়েছে কিন্তু সমিতি তখন অকার্যকর থেকেছে- এমন অভিযোগ তুলে শাকিব বলেন, ‘বিগতদিনেও একাধিক সিনিয়র শিল্পী এরচেয়েও ভয়ংকর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার শিল্পী সমিতি অভিযুক্ত সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত করেনি। বরং পাশে ছিল, রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু এখনকার শিল্পী সমিতির এসব আচরণ বিতর্কিত। আবারও বোঝা গেল, এই শিল্পী সমিতি সবাইকে এক করতে পারেনি, বরং বিচ্ছিন্ন করেছে। বিভেদ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিবেশ নষ্ট করেছে। হয়তো এজন্য চলচ্চিত্রের আজ এই দুর্দশা। এমনিতেই নানা কারণে সিনেমা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তার মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সামনে আরও ঘোরতর বিপদ।’
শাকিব মনে করেন, যারা পরীমণিকে বিপথে নিয়ে গেছেন, তাদেরকেও খুঁজে বের করা উচিত। পরীমণি ৩০টির বেশি সিনেমার সাথে জড়িত বলে তিনি জানান। কিন্তু যারা বছরের পর বছর একটি সিনেমাতেও কাজ না করে দিনের পর দিন শিল্পী সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে তাদেরও আয়ের উৎসও খুঁজে বের করা উচিত বলে মন্তব্য করেন এই শীর্ষ তারকা।
অন্যদিকে, শিল্পী সমিতিকে এমন কাঠগড়ায় তোলার পর অনেকেই মনে করছেন শাকিব-সমিতির পুরনো দ্বন্দ্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। নির্বাচনকে ঘিরে একসময় সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সঙ্গে শাকিবের দ্বন্দ্ব অপ্রীতিকর অবস্থা পর্যন্তও গড়িয়েছিল।