নিজস্ব প্রতিবেদক »
চোখে পানি টলমল। নিজের ছেলেদের নিখোঁজ হওয়ার হৃদয়বিদারক ঘটনা শুনাচ্ছিলেন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কালু এবং রাশুর ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম।
শুধু মরিয়ম বেগমই নয় নিজের ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন এবং সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়ে নিখোঁজ জালালের পিতা সৈয়দ নুর জানান, আমার ছেলের ছোটো ছোটো একটি মেয়ে এবং দ্ইুটি ছেলে রয়েছে। প্রতিবার মাছ ধরতে গেলে সপ্তাহের ভেতর চলে আসে। এবার দশদিন হওয়ার পরও তাদের বাবা না আসায় তারা বার বার জিজ্ঞেস করছে তাদের বাবা কখন আসবে। ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েগুলোর এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারছিনা। জানিনা আমাদের ছেলেরা কোন সাগরে ভাসছে। প্রশাসন চাইলে আমাদের ছেলেদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনতে পারবে।
এদিকে বিয়ের মেহেদীর রঙ লেগে আছে ১৯ বছর বয়সী সাদিয়ার হাতে। ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ। নিখোঁজ মোরশেদ (২২) এর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের আগে কাফকোর সামনে তরকারির দোকানে চাকরি করলেও বিয়ের পর বেশি আয়ের জন্য সাগরে যায় মোরশেদ। তবে গত দশদিন মোরশেদের কোনো খবর পাইনি নববধূ সাদিয়া। সে জানেনা মোরশেদ কখন ফিরবে তার কাছে। সাদিয়া জানায়, তিনি (মোরশেদ) যাওয়ার সময় আমাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন, বলেছিলেন সাগর থেকে ফিরলে তিনি আমাকে আনতে যাবেন। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি চলে এসেছি। আমার বিশ্বাস তিনি অবশ্যই ফিরবেন।
মঙ্গলবার (২রা জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে আনোয়ারা উপজেলার সরেঙ্গা ঘাট থেকে ১৩ মাঝিমাল্লা নিয়ে ‘মা জননী’ নামের একটি ফিশিং ট্রলার মাছ ধরতে গিয়ে ইঞ্জিল বন্ধ হয়ে ৯দিন ধরে নিখোজ রয়েছে। এরই মাঝে ট্রলারটি খুঁজতে আনোয়ারার উপকূল থেকে আরো দুইটি ট্রলার পাঠানো হলেও ‘মা জননী’র কোনো খোঁজ না পেয়ে তীরে ফিরে আসছে তারা।
ট্রলারে থাকা মাঝিমাল্লা হলেন, কালু মাঝি (৫৫), আব্দুল মান্নান (৩০), মো. কালু (৩৬), রাশু মিয়া (২৫), মোরশেদ (২২), আলী হোসেন (৩০), রায়হান (২১), জালাল (২৮), মহিউদ্দিন (৩৫), হান্নান বাবুর্চি (৩৫), দেলোয়ার হোসেন (৩৫), মোহাম্মদ রাসেল (৩০), মো. সালাম (৪০)।
নিখোঁজ মো. রাসেল (২২) মোহাম্মদ কালো (৩৬) এদের ভাই শওকত (২৬) জানান, এই ধরনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা আগেও অনেকবার ঘটেছে। কিন্তু দুয়েকদিনের মধ্যে কোস্টগার্ড কিংবা অন্য কোনো ট্রলার নিখোজ জেলেদের নিয়ে আসত। গত ৬-৭ বছর আগে ২৬দিন পর বাংলাদেশ সরকার মায়ানমার থেকে জেলেদের উদ্বার করে এনেছিলো। আর তাদের কাছে যা খাবার আছে তাতে আরোও সপ্তাহ খানেক খেতে পারবে। তাই আমাদের সবার মন বলছে প্রশাসন চেষ্টা করলে আমার ভাইদের খুঁজে পাওয়া যাবে।
এদিকে ট্রলারটির মালিক মো. নিজাম উদ্দিন এবং মোন্না জানান, ট্রলার রওনা দেয়ার সময় সপ্তাহ-পনের দিনের খাবার ট্রলারে দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে রওনা দেয়ার পর শুক্রবার তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। তারা তখন জানিয়েছিলেন ট্রলারের ইঞ্চিলের সমস্যা হয়েছে ট্রলার চলছেনা তারা এখন পানিতে ভাসছে। পরবর্তীতে তখনই তাদের উদ্দেশ্য আরো দুটি ট্রলার পাঠানো হয়েছে কিন্তু ৪-৫ দিন ধরে খুঁজাখুঁজি করেও তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে তারা জানায়। বিষয়টি আমরা কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশকে অবিহিত করেছি।
এ বিষয়ে গহিরা নৌ-পুলিশের ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক জানান, এ বিষয়ে এখনো সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আর জেলেদের ভাষ্যমতে এরা যেহেতু টেকনাফের ওইদিকে গেছে তাই এটা আমাদের এরিয়া পেরিয়ে গেছে। তবুও যেহেতু এখান থেকে গেছে তাই আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং অফিস থেকে এটা কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীকে জানানো হয়েছে। সম্মিলিতভাবে আমরা নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারের বিষয়ে তৎপর রয়েছি।
এদিকে কোস্টগার্ড সিসি সাঙ্গু স্টেশন অফিসার ছোটন জানান, বিষয়টি আমাদের সব জায়গায় জানানো হয়েছে এখনো নতুন কোনো আপডেট পাইনি, আপডেট পেলে জানানো হবে।
পরিবার প্রহর গুনছে কবে তারা ফিরবেন
মাঝিমাল্লা নিয়ে ফিশিং বোট নিখোঁজ