নিজস্ব প্রতিবেদক »
যাত্রীসেবাসহ রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়েকে এবার দুটি থেকে চারটি অঞ্চলে (পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হবে মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল) ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে বর্তমান চারটি বিভাগকে বাড়িয়ে আটটি বিভাগে পরিণত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান কাঠামো বিভাজন সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীসেবাসহ রেল নেটওয়ার্ক বাড়াতেই চার অঞ্চলে ভাগ করা হচ্ছে রেলওয়েকে। ট্রেন পরিচালনা ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবে এসব বিভাগ ও অঞ্চল। এর আলোকে রেলওয়ের জনবল কাঠামো পুনর্বিন্যাসের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
গত মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ২৩ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখে রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং জনগণের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান দুটি অঞ্চলকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করার অনুশাসন প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দুটি কমিটি গঠন করেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এ সংক্রান্ত সুপারিশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সভায় উত্থাপন করেন। এতে একটি কমিটি চারটি অঞ্চল ও পাঁচটি নতুন পরিচালন বিভাগ এবং আরেকটি কমিটি চারটি অঞ্চল ও আটটি পরিচালনা বিভাগে বিভক্তির প্রস্তাবনা দিয়েছিল।
অবেশেষে ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অঞ্চল ও বিভাগ বিভক্তির চূড়ান্ত প্রস্তাবনা দেয় গঠিত কমিটি। একইসঙ্গে জনবল কাঠামোতেও পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে রেলওয়েতে দুটি অঞ্চল ও চারটি বিভাগে ৪৭ হাজার ৬৩৭ অনুমোদিত জনবল আছে। অঞ্চল ও বিভাগ বাড়ানোর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক আরও সাত হাজার ৩০৯ জন যোগ করে জনবল ৫৪ হাজার ৩৪৬ করার প্রস্তাব করেন।
জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা নিয়ে গঠিত রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলকে ভেঙে খুলনা ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা নিয়ে নতুন ‘দক্ষিণাঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। নতুন এ অঞ্চলের অধীনে পরিচালন বিভাগ হিসেবে যথাক্রমে যশোর ও ফরিদপুর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে গঠিত বর্তমান পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ঢাকা ও ময়মনসিংহকে আলাদা করে ‘মধ্যাঞ্চল’ নামে একটি নতুন অঞ্চল গঠিত হবে। এ অঞ্চলের অধীনে পরিচালন বিভাগ থাকবে ময়মনসিংহ ও ঢাকা। এ সিদ্ধান্তের আলোকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে থেকে ঢাকা বিভাগ বাদ পড়ায় নতুন পরিচালন বিভাগ হিসেবে সিলেটের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী ও রংপুর নিয়ে গঠিত রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের পরিচালন পরিধির এলাকা কমলেও বিদ্যমান পরিচালন বিভাগ পাকশী ও লালমনিরহাট অপরিবর্তিত থাকবে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, চার জন মহাব্যবস্থাপক নতুন চার অঞ্চলের প্রধান হবেন। আর তাদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন একজন করে বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক। এক্ষেত্রে ট্রেন পরিচালনাগত সিদ্ধান্তগুলো নেবে অঞ্চল ও বিভাগ। আর নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো দেখবে রেলের সদর দফতর তথা রেলভবন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক কামরুল আহসান নতুনভাবে প্রস্তাবিত বিভাগসমূহের অধিক্ষেত্র, জনবলসহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পার্সোনেল শাখার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের রেলপথ মন্ত্রণালয়ে দ্রুত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।