সুপ্রভাত ডেস্ক »
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানে নির্যাতিত ৩৫ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের ১-পশ্চিম নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ/১ ব্লকে যান আসাদ আহমাদ খানের নেতৃত্বে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আদালত আইসিসির ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
সেখানে বেলা ১১ টা ২০মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করে প্রতিনিধিরা যান বালুখালীর ১২ নম্বর শরণার্থী শিবিরে। যেখানে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অবস্থান করেন তারা।
এ সময় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ, সম্ভ্রমহানিসহ ভয়াবহ নির্যাতন, আগুনে ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার বর্ণনা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালতের প্রতিনিধিদের। খবর বিডিনিউজের।
প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের এসব বর্ণনা শুনে আরও কয়েকজনের তথ্য সংগ্রহ করতে আবারও আসতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে সাক্ষ্য প্রদানের প্রয়োজনে এসব রোহিঙ্গাদের নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে এবং যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তাও।
তাদের সঙ্গে থাকা কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিনিধিদলটি কুতুপালংয়ে ১৫ জন ও বালুখালীতে ২০ জন রোহিঙ্গার সাথে আলাপ করে তথ্য সংগ্রহ করেন।
এর বিস্তারিত কোন তথ্য প্রদানে এই কর্মকর্তা রাজী না হলেও প্রতিনিধিদলের সাথে আলাপ করা রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এর চেয়ারম্যান মাস্টার জুবাইর জানান, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ, সম্ভ্রমহানিসহ ভয়াবহ নির্যাতন, আগুনে ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার তথ্য নিয়েছেন তারা।
‘রোহিঙ্গারা যে তা দেখেছেন, যাদের স্বজন হারিয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন।’
প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপকারী এক নারী জানান, ‘তিনি এবং তার পরিচিত নারীদের মধ্যে যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা, তার স্বজনদের হত্যার তথ্য তিনি জানিয়েছেন।’
রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে আছে।
২০১৭ সালের ওই নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর কিছুদিন পর এরসঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করে আইসিসি। কিন্তু ওই আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে মিয়ানমার। কেননা, বাংলাদেশ আইসিসির সদস্যভুক্ত রাষ্ট্র হলেও মিয়ানমার এর সদস্য নয়।
তবে আইসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সদস্য রাষ্ট্র না হলেও রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ঘটনার বিচারে কোনো সমস্যা হবে না। এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নির্যাতনের ব্যাপ্তি নিয়ে তদন্ত করছে আইসিসির প্রসিকিউশন বিভাগ।
তদন্ত প্রক্রিয়ায় তথ্যানুসন্ধানের অংশ হিসেবে চারদিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছান করিম আসাদ আহমাদ খান।
সেদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং দ্বিতীয়দিন বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর বুধবার কক্সবাজারে আসেন আইসিসির এই কৌঁসুলি।
কক্সবাজারে পৌঁছে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এই আইনজীবী।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও তাদের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং ক্যাম্পের নারী ও শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আইসিসি কৌঁসুলি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।