নিজস্ব প্রতিবেদক»
দিনমজুর মোহাম্মদ নুর আলম। লকডাউনে কাজ বন্ধ থাকায় আয়হীন বাসায় বসে আছেন চারদিন। বাসায় সবজি না থাকায় বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে এসেছিলেন সবজি কিনতে। বাজারের বেশিরভাগ সবজির দাম সাধ্যের বাইরে হওয়ায় দুই কেজি আলু কিনে চলে যেতে হয় বাসায়। বাজারে গত একমাস ধরেই বাড়তে থাকা সবজির দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় নুর আলমের মতো দিনে এনে দিনে খাওয়া নিম্ন আয়ের লোকদের অবস্থা এমনই।
গতকাল নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার ও ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে লকডাউনের কারণে ক্রেতাদের আনাগোনা অন্যান্য সময়ের চেয়ে কম। ক্রেতাদের সংখ্যা কম থাকলেও সবজির দাম টানা চার সপ্তাহের মতো বেশি। বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ কম থাকায় এ সপ্তাহেও বেশিরভাগ সবজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবজির দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ, মাংস ও ভোজ্যতেলের দাম। তবে দাম অপরিবর্তিত থাকলেও এসব পণ্যের দাম এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। লকডাউনের কারণে নিম্নশ্রেণী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের আয় কমে যাওয়ায় বাজারে এসে বিপাকে পড়ছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। এসময় বাজারে আলু ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার উপরে হওয়ায় অনেককে পছন্দের সবজি না নিয়ে আলু কিনে চলে যেতে দেখা গেছে।
ক্রেতাদের দাবি, লকডাউনে আয় না থাকায় বেশি দামে সবজি কেনা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি, সবজির সরবরাহ কম থাকায় বেশি দামে সবজি কেনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম বেশি থাকলেও এখনো সাধ্যের মধ্যে রয়েছে আলুর দাম। এখনো প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা, এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মানভেদে প্রতিকেজি টমেটো ৮০ থেকে ১০০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁরস ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ধুন্দল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, লাউ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা, খিরা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, এবং তীত করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। প্রতি আঁটি লাল শাকের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কুমড়ো শাক ৩০ টাকা, কলমি শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, পাট শাক ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং পুঁই শাক বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।
তবে চলতি সপ্তাহেও অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় এবং প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। এছাড়া এ সপ্তাহে অপরিবর্তিত রয়েছে ভোজ্য সয়াবিন তেলের দাম। প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, খোলা পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। এক লিটার বোতলজাত পুষ্টি ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, তীর সয়াবিন তেল ১৫০ টাকা এবং রূপচাঁদা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৩ টাকায়। এছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত বসুন্ধরা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬৯০ থেকে ৭০০ টাকা, পুষ্টি সয়াবিন তেল ৬৯০ থেকে ৭১০ টাকা এবং রূপচাঁদা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৭১০ থেকে ৭২০ টাকায়।
আকারভেদে প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। ছোট আকারের রুই বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, বড় আকারের রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, বড় আকারের কাতাল মাছ ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাঝারি আকারের মৃগেল মাছ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, পাংগাস ১১০ থেকে ১২০ টাকা, বিগহেড মাছ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, পাবদা মাছ ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, শিং মাছ আকারভেদে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, কোরাল মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা এবং কার্পিও মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়, সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।