নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য এম এম মোতালেব বলেন, ‘জীবনে একদিনও আওয়ামী লীগ না করে দুই বার আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন নদভী। স্ত্রী, ভাইপো, শ্যালক ও ভাগিনা সিন্ডিকেট করে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিলেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে। বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আছে। অথচ এখন চোরের মায়ের বড় গলা হয়েছে।’
গতকাল রোববার দুপুরে প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আবু রেজা নদভীর সঙ্গে জামায়াতের প্রত্যক্ষ ছায়া রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নদভী সাহেবের সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি যত্রতত্র জামায়াতের ভূত দেখছেন। এটা দেখা স্বাভাবিক। কারণ তার অতীত-বর্তমানের সঙ্গে জামায়াতের ছায়া প্রত্যক্ষভাবে রয়েছে। তার হাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন। চট্টগ্রামে আর কোনো এমপি নেই যার হাতে এত বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখন তিনি তা অস্বীকার করতে চান।’
নদভী ও তার সমর্থকরা এখন এলাকায় কোণঠাসা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপি এখন হরতাল অবরোধ করার মতো ক্ষমতা রাখে না। আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে তারা সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এলাকায় কোণঠাসা। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিকভাবে সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী জামায়াতের জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা তো তিনিই ক্ষমতায় থাকতে করেছেন। আর এখন মায়াকান্না করছেন। আমার পরিবারের সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আস্থাশীল। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যেকটি নির্দেশনা মেনে চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সুতরাং পরিবার তুলে বিদ্রুপ করে মূলত তিনি আমার মানহানির চেষ্টা করেছেন। আমি তার এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি ছয় খুনের মিথ্যা গল্পের ফাঁদ পেতেছেন। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া দুই থানার ওসি এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। নদভী সাহেব এওচিয়া ইউনিয়নের শনখোলা গ্রামে একজনের মালিকাধীন একটি ব্রিকফিল্ড অন্যজনের নামে লিখে দিয়ে রাতারাতি ইট লুট করেছিলেন। টিআর ও কাবিখা প্রকল্প এমনভাবে বণ্টন করেছিলেন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন যাতে তার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। তার ক্ষমতার দাপটের সামনে পিআইও ও ইউএনও ছিল অসহায়। সরকারি প্রকল্প নয়-ছয় করে, ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’
নিজেকে হাসির পাত্র বানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেম ‘সংবাদ সম্মেলনে কাল্পনিক, অবাস্তব বক্তব্য রেখে নদভী সাহেব নিজেই হাসির পাত্র হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নদভী সাহেবের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া পড়লে বুঝতে পারবেন তিনি কতটা অগ্রহণযোগ্য। একদিনও আওয়ামী লীগ না করে ক্ষমতার গাড়িতে চড়ে উড়ে এসে জুড়ে বসে তিনি যে রাজনীতি করেছেন, তা ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। নিজে খেয়ে আওয়ামী লীগের নামে দুর্নাম রেখে গেছেন। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করেছেন, আলেম ওলামাদের নির্যাতন করেছেন। আমি যেসব সন্ত্রাসী, চোর-বাটপারদের ইতোমধ্যে দমন করেছি, তাদের পক্ষ নিয়েই নদভী ওই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। অসংলগ্ন প্রলাপের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতে চেয়েছেন। নদভীর কাছ থেকে পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে এবং দুর্নীতির বিচার চেয়ে মানববন্ধন হয়েছে। তারা সবাই ছিল উনার পাড়া-প্রতিবেশি। যারা ওনার হাতে নির্যাতিত এবং ভাইপো সেলিম চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্চিত হয়েছিল।’
নদভীকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শেখানোর কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি দলের স্বার্থে নদভীর প্রধান নির্বাচনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আমার কাঁধের ওপর ভর করে তিনি নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়েছিলেন। উনাকে জয় বাংলা স্লোগান শিখিয়েছিলাম আমিই। কিন্তু তার একের পর এক লুটপাট ও দুর্নীতি আমাকে তার সঙ্গে থাকতে দেয়নি।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মিথ্যাচার করে নদভী প্রফেসর হয়েছিলেন। ওনার ডিগ্রির যে কাগজ সেটার তথ্য নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লক্ষেèৗতে খোঁজ নিলেই সব তথ্য পাওয়া যাবে। এ পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিষয়ে ১৪ হন পিইএচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যেখানে তার নাম নেই। তার সার্টিফিকেটে তিনি ২০১১ সালে ভর্তির কথা উল্লেখ করেছেন এবং ২০১২ সালেই তিনি ডিগ্রি অর্জন করেন। এটা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক বছরে কীভাবে পিইএচডি ডিগ্রি অর্জন করা যায়- সেটাই প্রশ্ন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলার দফতর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়ুয়া, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন হিরু, সাতকানিয়া উপজেলার সহসভাপতি আহমদ সাইফুদ্দীন সিদ্দিকী ও প্রদীপ কুমার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন, জসিম উদ্দীন ও উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আঞ্জুমান আরা বেগম।