পাহাড় অরণ্য নদী সমুদ্র মিলে চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও পরিবেশ সবুজ ও সতেজ থাকার কথা কিন্তু আমাদের অদূরদর্শী কর্মকা- ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের সময় পরিবেশ স্বার্থকে গুরুত্ব না দেওয়ায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীর বাতাস এখন অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যমতে চট্টগ্রামের বাতাস স্বাস্থ্যকর মানে উঠতে পারেনি চলতি বছরের কোনদিনেও। বাতাসের মান পরীক্ষা করা আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট আইকিউ এয়ার ডটকমে গত ৫ মার্চ চট্টগ্রামে বাতাসের মান দেওয়া হয়েছে ১১০ যা নারী শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য অস্বাস্থ্যকর বলা হয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকে এসব তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণে প্রকট হচ্ছে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ, অর্থনৈতিক ক্ষতিও প্রচুর।
অপরিকল্পিত নির্মাণ ও সংস্কারকাজ, ইটভাটা, কলকারখানা, গাড়ির কালো ধোঁয়া, কাঠ ও গোবর জ্বালানিÑএসব কারণে চট্টগ্রামে বায়ুদূষণ বাড়ছে। পরিবেশ অধিদফতর বলছে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএমÑ১০) গ্রহণযোগ্য মান ঘণ্টায় ১৫০ পিপিএম। গত ১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাতাসে তা ছিল ১৭৪ পিপিএম, গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে আরো বেশি ছিল।
নগরীতে ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে রাস্তা সংস্কার, পুনর্নির্মাণ, ওয়াসার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নগরীর অধিকাংশ এলাকা ধূলিধূসরিত। সবুজ গাছপালা বিবর্ণ, ধূসর হয়েছেÑ এই পরিস্থিতি। নগরবাসীর জন্য এখন অসহনীয় অবস্থা সৃষ্টি করেছে। ধুলাবালির কারণে ফুসফুস, শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি ব্যাপক যা এখন করোনাকালে বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এ ধরণের উন্নয়ন কাজ সারা বছরই চলছে, ধুলাবালি এড়াতেও পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে নিয়মিত পানি ছিটানো আবশ্যকীয় কাজ অথচ এই কাজটি ঠিকমতো করছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট সংস্থাও এ ব্যাপারে অনেকটা দায়সারা গোছের দায়িত্ব পালন করছে। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা দরপত্রের অন্যতম শর্ত। তাছাড়া দেশের প্রচলিত আইনেও অনেক বিধিবিধান রয়েছে। এসব ঠিকমতো প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ ক্ষেত্রে তারা গণমাধ্যমে যে দায়সারা বক্তব্য দিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে পরিবেশ ও জনজীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেখানে যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করার কথা অথচ তা হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) তথ্য অনুযায়ী বায়ুদূষণজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। এতে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা উপলব্ধি করা সকলের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য।
নগরীর যেখানে নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ চলছে সেখানে নিয়মিত পানি ছিটানো আবশ্যক। রাস্তাঘাট ধূলি ধূসরিত, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উচিত নিয়মিত পানি ছিটিয়ে পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখা। যে সকল প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কাজ করছে তাদেরকে বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে।
সেই সাথে বায়ুদূষণের অন্যান্য উৎসের ব্যাপারে প্রশাসন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে- আমরা এটি আশা করি। নগরবাসীকে পরিবেশ বিপন্নতার মধ্যে নিক্ষেপ করা উচিত নয়, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, পরিবেশ সুরক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়