সুপ্রভাত ডেস্ক »
‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে’ সততা ও দেশপ্রেমে জোর দিতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অর্জনগুলো নস্যাৎ করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে দলকে শক্তিশালী করার উপরও তিনি জোর দেন।
শেখ হাসিনার ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে’ তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বুধবার আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা গণভবনে যান। সেখানে তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন তিনি।
আওয়ামী লীগই একমাত্র দল হিসেবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে দাবি করে নেতা-কর্মীদেরকে দেশসেবায় আরও তৎপর হওয়ারও তাগিদ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, এটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলতে হবে।
ধন-সম্পদ কারও চিরদিন থাকে না। আর মরলেও মাটির নিচে যেতে হবে, কেউ কিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু বেশি করলে বদনামটা নিয়ে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের যে রাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, তার কিছুদিন আগে দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা গিয়েছিলেন জার্মানিতে। বিদেশে থেকেই পরিবারের সবাইকে হারানোর খবর পান তারা।
পরে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। ৪৩ বছর আগে দেশে ফিরে আসার দিনের কথা স্মরণ করে অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেদিন ফিরে এসেছিলাম পেয়েছিলাম এদেশের জনগণকে আর আমার আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী। সেদিন থেকে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের জনগণ তারাই তো আমার পরিবার।’
দেশে ফিরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ধানম-ি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে না পেরে বাইরের রাস্তায় বসে মিলাদ পড়ানো, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং বিএনপির শাসনামলে ঘটা নানা ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি।
‘সততা থাকলে মানুষ সব পারে’
আওয়ামী লীগের নতুন স্লোগান স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা পুনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুধু উন্নয়নশীল দেশ উত্তরণ না, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সেটাও আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি।
সততা থাকলে পরে, আর উদ্দেশ্যটা যদি সৎ হয়, তাহলে যে কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য আনা যায়। এই কথাটা সব সময় মনে রাখি। লক্ষ্য একটাই দেশের মানুষের জীবনটা উন্নত করে দেওয়া, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেওয়া।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সেই হাসি ফোটানো একমাত্র কর্তব্য। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।
মানুষের কল্যাণে কাজ করার তৃপ্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে যখন একজন ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দেই, তাদের মুখের হাসি আর চোখের পানি যখন একাকার হয়ে যায়। আমি মনে করি এর চেয়ে বড় পাওয়া এবং স্বার্থকতা আর কিছু নাই।
‘চক্রান্ত চলছে’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ এগিয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, এই অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।
তিনি বলেন, খুব স্বাভাবিকভাবে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বা যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে যেন আমাদের অর্জনগুলো নস্যাৎ হয়।
জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র দল বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে, বাকিগুলো লুটেরার দল। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে না। ‘সে কথা মাথায় রেখে ঐ সন্ত্রাসের দল, খুনির দল, ওই যুদ্ধাপরাধীদের দল এরা যেন আর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে সবাইকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানাই।
‘ভোট ডাকাতরা এখন ভোটের অধিকার চায়’
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট চোর যারা ছিল, রীতিমতো ভোট ডাকাত যারা ছিল, তারাই এখন গণতন্ত্র চায়, ভোটের অধিকারের কথা বলে। যাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে, তাদের কাছে শুনতে হয় এ সমস্ত কথা!’
জনগণের আস্থাই আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আর কোনো শক্তি নাই। বাংলাদেশের জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র বন্ধু।’ খবর বিডিনিউজ।
আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচনী পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা এনেছে দাবি করে দলীয় সভাপতি বলেন, ‘গণতন্ত্র নিয়ে অনেকে কথা বলে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার কবে ছিল? পঁচাত্তর সালের পর থেকে যেভাবে ভোট চুরি, ভোট কারচুপি, ভোট নিয়ে খেলা, মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা; বরং ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এই স্লোগান দিয়ে মানুষকে ভোট সম্পর্কে সচেতন করা, এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। তারপর নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইন করে দেওয়া হয়েছে। ‘যেখানে ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা হত, সেখানে ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, নির্বাচনী পদ্ধতিকে যতটুকু সংস্কার করে নিয়ে আসা বা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন, এগুলোতো আওয়ামী লীগেরই করে দেওয়া। তারপরও কেউ যখন আমাদের ছবক দিতে আসে, গণতন্ত্রের, নির্বাচনের ছবক দিতে আসে।’
গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও এর সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
‘আরও শক্তিশালী হতে হবে’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়নের গতি যাতে ত্বরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে এটাই আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা। কাজেই জাতির পিতার যে স্বপ্ন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি, জাতির পিতার সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’