নিজস্ব প্রতিবেদক »
সরকারি দল হোক আর বিরোধী দল হোক তারা একটি কথা বলতে অভ্যস্ত যে বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাকি বিশ্বের কোথাও নেই। আমি বলব সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম এনে এবং সেটি রেখে দিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন রাজনৈতিক নেতারাই। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কেউ প্রশ্রয় দিয়েছেন, কেউ আপসের রাজনীতি করেছেন, কেউ তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেছেন।’
গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের নন্দনকাননে ‘ইসকন’ আয়োজিত সম্প্রীতি পুনরুদ্ধার সমাবেশে এসব কথা বলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। সনাতনী সম্প্রদায়ের মঠ মন্দির ভাংচুর, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও ইসকন নোয়াখালী মন্দিরে হত্যাসহ দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উত্তরণে নগরীর নন্দনকাননে এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের মঞ্চে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি ও জাসদের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
আপসের রাজনীতি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ আবার ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’র দিকে যাচ্ছে কি না এ প্রশ্নও তুলেছেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি আওয়ামী লীগকে ‘আত্মশুদ্ধ’ হওয়ার এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানান।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন ‘সরকারি দলের ভেতরের সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বাইরের অপশক্তির সঙ্গে মেলবন্ধন করে আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, আমার ওপর হামলা করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। আমরা যখন এসব কথা বলি তখন সরকারি দল থেকে বলা হয় ঘরের ভেতর নাকি ‘কাউয়া’ ঢুকেছে। আমরা জানতে চাই ওরা কারা? পরগাছা ‘কাউয়া’দের বিরুদ্ধে আপনাদের ভূমিকা কী? তাদের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা তো আমরা এখনও সরকারি দল থেকে দেখিনি।’
ইসকন-বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রফেসর ড. অনুপম সেন। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, জাসদ নেতা ইন্দুনন্দন দত্ত, ইসকন-চট্টগ্রামের সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রমুখ।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন বলেন, এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্পীতি বিনষ্টের চেষ্টা আজ নতুন নয়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সাল থেকে এই চেষ্টা হয়ে আসছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি স্বাধীনতার পর থেকেই হিন্দু-মুসলিম অনৈক্য ঘটানোর জন্য সজাগ আছে। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা বিলুপ্ত করার জন্য, হিন্দুদের দেশ থেকে তাড়ানোর ষড়যন্ত্র করে আসছে। এ জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিনই রেডিও থেকে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয়।’
রাষ্ট্রধর্মের মাধ্যমে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে মন্তব্য করে অনুপম সেন বলেন, ‘১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু আমাদের যে অসাধারণ সংবিধান দিয়েছিলেন, তাঁর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সেই সংবিধান আমরা অনেকটাই হারিয়েছি। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই সংবিধান অনেকটাই পুনরুদ্ধার করেছেন। কিন্তু এখনও অনেক আওয়ামী লীগ নেতার মনোজগতে দ্রুত পরিবর্তন আনা কঠিন, তারা ধীরে চলতে চান। কিন্তু আমরা তা চাই না। আমরা চাই, আজ থেকে এদেশের মানুষকে সমান অধিকার দিতে হবে।’
সমাবেশ সকাল থেকে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন জেলা উপজেলার হিন্দু ধর্মের লোক ও সংগঠন অংশগ্রহণ করে। সমাবেশ শেষে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পদযাত্রাটি নন্দনকানন থেকে চেরাগী পাহাড় মোড় ঘুরে প্রেস ক্লাব এসে শেষ হয়।