কর্ণফুলীর শিকলবাহা খালে কালো পানি
সুমন শাহ্, কর্ণফুলী :
কর্ণফুলী নদীর দড়্গিণ তীরে গড়ে উঠেছে প্রায় কয়েক শতাধিক শিল্প কারখানা। আর রয়েছে কর্ণফুলী নদী থেকে আসা কয়েকটি শাখা খাল। এ উপজেলার চরলড়্গ্যা ও শিকলবাহা ইউনিয়নের ঠিক মধ্যেখানে শিকলবাহা খালটিতে এক সময় খরস্রোত থাকলেও বর্তমানে শিল্প কারখানা ও গরুর খামারিদের বর্জ্যে বিষের খনিতে পরিণত হয়েছে। এ খালে কালো আর উৎকট গন্ধের এই পানিতে দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কায় পড়েছে।
খালের দুই পাশে অবৈধভাবে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। বর্জ্যে ও ময়লায় খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চাষাবাদ করতে পারচ্ছেন না কয়েক শতাধিক কৃষক। বর্তমানে খাল দখল কারণে তাতে আটকে থাকায় বর্জ্যে দূষিত হয়ে কালো পানিতে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উপজেলার ব্যসত্মতম স্থানে এ ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন এখনো নির্বিকার। এ কারণে কৃষক ও সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ছে ড়্গোভ।
সরেজমিন চিত্র বুধবার দুপুরে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত শিকলবাহা খালের মুখে গিয়ে দেখা যায়, কালো রঙের পরিণত হয়েছে কালো ও বর্জ্যেমিশ্রিত ঘোলাটে ধারা। খাল থেকে গৃহস্থালি এবং বর্জ্যমিশ্রিত কালো পানি গিয়ে মিশে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। সঙ্গে রয়েছে পলিথিন, পস্নাস্টিক এবং নানা অপচনশীল সামগ্রী। শিকলবাহা মাজার গেট এলাকা থেকে শুরু হয়ে আলী হোসেন মার্কেট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকার খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে ২৫-৩০টির অধিক গরুর খামার। খামারিদের পশুর বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে খালের বিভিন্ন অংশও। নেই কোনো জোয়ার ভাটার পানি। কোনো কোনো অংশে খালের অসিত্মত্ব টিকে আছে কয়েক ফিটের মধ্যে। এ এলাকার শতাধিক কৃষক খালের পানি দিয়ে জমিতে চাষাবাদ করলেও বর্তমানে শিল্প কারখানা ও পশুর বর্জ্যে দূষিত হয়ে খাল-বিল ও জলাশয়কে বিষের খনিতে পরিণত হয়েছে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে চরলড়্গ্যা ও শিকলবাহা ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক। অল্প বৃষ্টিতে দেখা দেয় তীব্র জলজট সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধের।
স্থানীয় পলস্নী চিকিৎসক বশিরুল আলম জানান, এ খালে এক সময়ের পানি মানুষ কৃষি কাজসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত করত; অনেকেই মাছ ধরত খাল থেকে। এখন আর সে পানি আর মাছ পাওয়া যায় না। এমন অবস্থা হয়েছে পানি দেখলেও খারাপ লাগে। আমি দীর্ঘদিন ধরে এ খালের পাশে চেম্বার করছি। অল্প বৃষ্টি বা বেশি বাতাশে গন্ধে বসাও যায় না। এতে করে দূষিত করছে এলাকার পরিবেশও।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, কর্ণফুলী নদী থেকে আসা শাখা খালটি এ উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে খালটার অবস্থা খুব খারাপ। খালের অনেক অংশে এখন ভরাট হয়ে গেছে। সে জন্যই আগের মত জোয়ার ভাটার পানিও চলাচল করতে পারে না। এই পানিতে জমির উবর্রতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। চাষিরাসহ সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্ট আর চুলকানিতে ভুগছেন। তিনি আরো বলেন, এ খালকে দূষণমুক্ত রাখতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, বন্ধ করতে হবে শিল্প কারখানা ও খামারিদের বর্জ্য ফেলা। নদীতে না ফেলতে দিতে হবে কঠোর নির্দেশনা।
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, এ খালটি উপজেলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেই সরেজমিনে দেখে এসেছি। খালের কিছু অংশ একটি শিল্প কারখানা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিলো। স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে গিয়ে সেটি উদ্ধার করা হয়। তিনি আরো বলেন, আর যারা অবৈধভাবে খাল দখল ও খালে বর্জ্য ফেলে নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং খালটি পুনরায় উদ্ধার করতে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আশা করি শীঘ্রই উদ্ধার করে শুরু হবে।