রাকিবুল হাসান রাকিব :
এক দেশে মহসিন নামের এক তরুণ ছিল। সে একা সেখানে বসবাস করতো। তার একটা গাভি ছিল। সে রোজ জঙ্গল থেকে ঘাস আর গাছের বিভিন্ন ডালপালা কেটে নিয়ে এসে গাভিটাকে খাওয়াতো। গাভিটা এবার বেশ মোটাতাজা হয়। আর তাকে ক-দিন পরপর গোসল করিয়ে দিতো সে। সে গাভিটিকে খুব আদর-যতœ করে; গাভিটকে খুব ভালোবাসে।
মহসিন সেখানে থাকতে থাকতে একটা খুব সুন্দর বাগান করে। সেখানে ড্রাগন ফল ডালিম আপেল জাম্বুরা ইত্যাদি ছাড়াও আরও বিভিন্ন ফুল-ফলের গাছ ছিল। সেখানে ফলে-ফুলে পাখিরা, প্রজাপতি আর বিভিন্ন পশুপাখি আসে। পাখির কিচির-মিচির শব্দ তার শুনতে খুব ভালো লাগে।
একদিন সে তার গাভিটিকে বাগানে নিয়ে যায়। গাভিটি বাগানের চারপাশে ঘাস খেয়ে খেয়ে ঘুরে বেড়ায়। তারপর সে চলে যায়। হঠাৎ কিছুক্ষণ পরে সে ফিরে আসতে-আসতে দেখে, তার গাভিটর একটা বাছুর হয়েছে। তা দেখে পশুপাখির তুমুল এক আনন্দের কোলাহলের ঢেউ চারদিকে। সব পশুপাখি নিচে নেমে এসে গাভিটিকে আনন্দ-শুভেচ্ছা জানান। তারাও আনন্দে বিমোহিত। চারপাশে ডাকাডাকি; নাচানাচি আর আনন্দের নব এক জোয়ার।
তা দেখে বনের থেকে এক ডাইনি বেরিয়ে আসে। এসব আনন্দের জোয়ার দেখে তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সে দেখে চিৎকার করে বলে, বা বাহ্! মনে হয় গাভিটি সোনার বাছুর জন্ম দিয়েছে। দেখি, দেখি! সবাই প্রশংসা করলেও ডাইনিটা মুখ বেঁকিয়ে বলে; এমন কি হলো তোমাদের এতো আনন্দের? এটা একটা বাছুর হইলো। এ কথা শুনে গাভিটির মন খারাপ হয়ে গেল। তারপর গাভিটি বলে, পারলে তুমি একটা বাছুর জন্ম দিয়ে দেখাও! এ কথা শুনে চোখমুখ লাল করে চলে গেল ডাইনি।
এরপর মহসিন বাছুর আর গাভিটি নিয়ে বাড়িতে চলে গেল। এরপর থেকে গাভিটিকে আরও বেশি যতœ নিতে থাকে। খাবার পানি যা কিছু প্রয়োজন হয়। ডাইনি বাগানে আসে। তা দেখে। এসব দেখে তার কিছুতেই সহ্য হয় না। বাছুরটা মাতৃদুগ্ধ পান করলে তার আরও রাগ হয়।
ডাইনি চিন্তা করে, কি করা যায়? অনেক কিছু ভাবতে থাকে সে। তাই রোজ রোজ বাগানের চারপাশটা ঘুরেফিরে দেখে। একদিন সে দেখলো, মহসিন গাভির দুধ নিয়ে পান করছে। সে রোজ রোজ দুধ গরম দিয়ে খায়। আর ডাইনি দুধের ঘ্রাণ পেয়ে আর তার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। ডাইনি বলে, অনেকদিন সহ্য করেছি, আর না।
এরপর থেকে রোজ রাতে গাভি থেকে ডাইনি এসে দুধপান করে চলে যায়। সকালবেলায় মহসিন দুধ নিতে আসলে আর দুধ পায় না। একদিন-দু’দিন, তিন …। অনেক দিন এরকম অবস্থায় যায়। গাভিটও বুঝতে পারলো তার মালিক দুধের জন্য আসছে। গাভিটাকে একদিন বকাঝকা করে কয়েকটা বেতাঘাত করলো। বাছুরটাও দুধপান করতে পারছে না। তাই সে খুব রেগে বসে আছে।
ডাইনি আবার দুধপান করতে এলো। ডাইনি যখন দুধ খেতে মুখ বাড়িয়ে দেয়। গাভিটি ডাইনির মুখে পা’ দিয়ে খুব জোরে আঘাত করে। আর মাথা দিয়ে তাকে আঘাত করে। ডাইনি মাটিতে পড়ে গেল। সে আর ফিরে যেতে পারেনি। তার খুব আঘাত হয়েছে।
সকাল হলে মহসিন ঘুম থেকে ওঠে। দেখে ডাইনি পড়ে আছে। কি রে ডাইনি, এখানে কি করো? তোমার মুখটার এই বিকৃত অবস্থা কেন? ডাইনি কিছু বললো না। এই ডাইনি তুমি আমার এই বাছুরটার দুধ চুরি করে খেয়ে চলে যাও! দাঁড়াও আজ তোমাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।
এরপর মহসিন বাগান থেকে পশুপাখি সবাইকে ডাকে নিয়ে তাঁকে খুব অপমান করে তাড়িয়ে দিল। তাকে দুধচোর হিসাবে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দিল। এখন সবাই তাকে দুধচোর ডাইনি নামে ডাকে।
এরপর ডাইনি আর কখনো দুধপান করতে আসেনি।