বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন
নিজস্ব প্রতিনিধি, রামগড় :
আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বাড়িয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় এ মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করেন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত কয়েক মাস সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা শ্রম দিয়ে ১৩ জানুয়ারি সেতুর কাজ সম্পন্ন করেন। এখন পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন দু’দেশের জনগণ।
খাগড়াছড়ির রামগড়ে নির্মীয়মাণ স্থলবন্দর বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বাড়াবে। সম্প্রসারিত হবে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য। এটি হবে দেশের ২৩তম পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর।
সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা রামগড় স্থলবন্দর এই অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে। বৈদেশিক বাণিজ্যে তথা পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহ, বিনিয়োগ, বাজার সম্প্রসারণ ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে এগিয়ে যাবে দেশ। সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ আয়োজিত বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড এক্সপোর্ট ফেয়ার (বিআইটিএফ) উদ্বোধন কালে গত বছরের ২৭ অক্টোবর এ প্রসঙ্গে বলেন “চট্রগ্রাম বন্দরকে পূর্ব ভারতের কমপক্ষে পাঁচ কোটি মানুষ ব্যবহার করলে প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য কলকাতা বন্দরে যেতে ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এটা নির্মিত হলে চট্রগ্রাম বন্দরের দূরত্ব কমবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ‘নেইবারহুড ফাস্ট’ ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র প্রভার বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বীজ নিহিত আছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সহযোগিতার ওপরই। ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসাবে পরিচিত এই অঞ্চলের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি ও রামগড় বাজারের ব্যবসায়ী তাপস বিশ্বাসের ভাষ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই সচেষ্ট ছিল। এটা সম্ভব হওয়ায় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুনাচল (সেভেন সিস্টার্স) চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে সক্ষম হবে। খাগড়াছড়িসহ চট্রগ্রামের ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই রামগড় স্থলবন্দরের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন, সরেজমিন পরিদর্শনও করেছেন অনেকে। রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে, পুরো এলাকার চেহারাটাই পাল্টে যাবে বলে মনে করেন তাঁরা।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী বলেন, রামগড় স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালু হলে বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে যে, বিশাল ভূমিকা রাখবে নিশ্চিত ভাবেই তা বলা যায়। আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে সূচিত হবে এক নতুন দিগন্তের। আঞ্চলিক গণ্ডি ছাপিয়ে এ যেন বিশ্বব্যাপী
সেতুবন্ধনের এক পূর্বাভাস।