সিইসি হাবিবুল আউয়াল
অ্যাপসে মিলবে তথ্য
কেন্দ্রের ছবি তুলবেন সংবাদকর্মী
পর্যবেক্ষকরা, লাগবে না অনুমতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি, যেখানে দুই ঘণ্টা পরপর প্রতিটি কেন্দ্রে কত শতাংশ ভোট পড়ল তা ইনপুট দেওয়া হবে। দুই ঘণ্টা পরপর সবাই জানবে কত শতাংশ ভোট পড়ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে দশটার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে গিয়ে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এজন্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপক নিয়েছি, যাতে ভোটগ্রহণের সত্যতা মানুষের মাঝে ফুটে ওঠে।’
তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে নগরের পিটিআই মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের আয়োজনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি নগরের এলজিইডি মিলনায়তনে চট্টগ্রামের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তারা আমাদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের কথা বলেছেন। পোস্টার ছেঁড়া ও দুয়েক ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তাঁদেরকে আমরা যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি।’
নির্বাচনের আগের রাতে ভোট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আগের রাতে ভোটের যে সমস্ত কথা প্রচলিত রয়েছে আমরা নিরানব্বই নয়, একশ শতাংশ নিশ্চিত করতে পারি- সেটি কোনো অবস্থাতেই হবে না। এজন্য অনেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সকালে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যালট পেপার সকালে না গিয়ে ১০ দিন আগে অথবা ১০ মাস আগেও যদিও যায়, তাহলেও প্রার্থীরা তাদের পোলিং এজেন্ট দিয়ে সকালে ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ বাক্সগুলো খালি কি না সেটি দেখে তারপর বাক্স বন্ধ করবেন। সেক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে অবৈধ কোনো ব্যালট বাক্স ঢোকার সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা অবশ্যই দাঁড়িয়ে থেকে দেখে নেবেন ব্যালট বাক্সগুলো খালি আছে কি না। তারা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ গণনা ও ফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। সবকিছু সঠিকভাবে হয়েছে কি না জানবেন।’
ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলের. ‘ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে না। তারা সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ভেতরে ঢুকে ছবি তুলতে পারবেন। সত্য-মিথ্যা জনগণকে জানাতে পারবেন।’
নির্বাচনী সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘সহিংসতা হচ্ছে কমবেশি। নির্বাচন কমিশনের ডেলিগেট দেওয়া আছে স্থানীয়ভাবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তারাও যদি ব্যবস্থা নিতে না পারেন আমাদের কাছে রেফার করতে পারেন। অসংখ্যা লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও সহিংসার ঘটনা ঘটলে প্রার্থিতা বাতিল করব কি না সেটা ভেবে দেখব। এখন পর্যন্ত প্রার্থিতা বাতিলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ গুরুতর কিছু করলে আমরা প্রার্থিতা বাতিল করব।’
পেশিশক্তি ভোটকে প্রভাবিত করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে যেনো অবৈধভাবে কোনো লোক ঢুকতে না পারে সেটা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যদি প্রবেশ করেও ফেলে তাহলে বুঝতে হবে সে কোনো কুমতলব নিয়ে প্রবেশ করেছে। তাহলে ওই ভোটকেন্দ্রের পোলিং প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা প্রশাসনকে কঠিনভাবে বার্তা দিয়েছি কোনোভাবে এটাকে টলারেট করা যাবে না। আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতির মধ্যে অনেকে কালো টাকার বিনিময়ে পেশাদার কিছু গুণ্ডাকে ভাড়া করেন তাদেরকে বলা হয় পেশিশক্তি। পেশিশক্তি যাতে ভোটকে প্রভাবিত করতে না পারে সেটাও কিন্তু কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। যদি এটা হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে দুইটি আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ।