সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৫টি খাল খনন ও সম্প্রসারণ করলেও ২১টি খাল বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। সিএস খতিয়ানে এগুলোর অস্তিত্ব থাকলেও এখানে বহুতল ভবনসহ নানা ধরনের স্থাপনা রয়েছে। দখলকৃত এই খালগুলো চিহ্নিত করে এগুলো অবশ্যই পুনরুদ্ধার করা হবে। এই খালগুলো স্থানীয় কাউন্সিলররা চিহ্নিত করবেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন নগর ভবনে কে.বি আবদুচ সাত্তার মিলনায়তনে চসিকের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ১১তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী সহ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর, বিভাগী প্রধান, শাখা প্রধানগণ ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র আরো বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবয়নাধীন প্রকল্পের কাজে অধিকতর গতিশীলতা চাই। শুকনো মৌসুমে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। ছোট-বড় নালা নর্দমা ও খালগুলো থেকে আবর্জনা, মাটি ও পলিথিন সরিয়ে ফেলা হবে। মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে খালগুলো যেখানে বাঁধ বা দেয়াল আছে সেগুলো সিডিএর সাথে সমন্বয় করে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সিডিএর মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে প্রাণঘাতী কোন বিপর্যয় না ঘটে।
তিনি জানান, চসিক মশা নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও আলোকায়নকে অগ্রাধিকার দেয়। মশক নিধনে আলাদা ফোর্স করা হবে। এদের আলাদা পোশাক হবে। মশক নিধনে যে ওষুধ ছিটানো হয় তার কার্যকারিতা যাচাই করা হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নগরীকে ৬টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন অবহেলা ও অবজ্ঞা গ্রাহ্য হবে না। দায়িত্ব পালনে কেউ ব্যর্থ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আলোকায়নের ক্ষেত্রে কোন অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না। যে সকল সড়ক বাতি খারাপ বা অচল হয়েছে সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে সারিয়ে তুলতে হবে।
মেয়র রাজস্ব আয়ের পরিধি বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শুধু গৃহকরের মধ্যেই রাজস্ব আয়ের পরিধি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। অনেকেই ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে তাদেরকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে হবে। গৃহকরের ক্ষেত্রেও ফাঁকিবাজি আছে, অনেক বাড়ি মালিক বাড়ির কর দিতে অনীহা করে এবং কর আদায়কারীর সাথেও দুর্ব্যবহার করে। এসমস্ত বাড়ির মালিকদের সাথে টিও বা রাজস্ব কর্মকর্তা আলোচনা করে কর আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে যে ২৬টি খাত রয়েছে সেই খাতগুলোর আয় নিশ্চিত করতে হবে। এই খাতগুলো থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোন ঢিলেমি চলবে না।
তিনি নগরীর যানজট নিরসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে বলেন, দখলমুক্ত হবার পর ফুটপাত ও সড়ক আবার বেদখল হলে এ ব্যাপারে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেয়র যান্ত্রিক বিভাগের শৃঙ্খলার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের জ্বালানি অপচয় রোধ করতে হবে। সন্ধ্যার পর চসিকের কোনো ট্যাক্সি চলবে না। যে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পরিবহন কেনার জন্য ঋণ দেয়া হয়েছে চসিক তার জ্বালানি সরবরাহ দেবে না।
তিনি আরো বলেন, পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ার লক্ষ্যে আমাদেরকে পলিথিন বর্জন করতে হব। ইতোমধ্যে তিনটি কাঁচাবাজারে পলিথিনমুক্ত করার কাজ চলছে। আগামীতে নগরীর সকল কাঁচাবাজার পর্যায়ক্রমে পলিথিনমুক্ত করা হবে।
তিনি রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সহ সকলকে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার্থে নগরীর দেয়ালে পোস্টার না লাগানোর জন্য আহ্বান জানান। তিনি ঘোষণা করেন মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী উপলক্ষে ১০টি গৃহহীন পরিবারকে চসিক গৃহ নির্মাণ করে দেবে।