ব্যাংকসহ সব জায়গায় উপচেপড়া ভিড়
নিজস্ব প্রতিবেদক <
লকডাউনের আগের দিন নগরজুড়ে ছিল যানজট। মানুষ ঘর ছেড়ে বানের পানির মতো বাইরে বেরিয়ে এসেছে। মার্কেট, শপিংমল, সুপার শপ, ব্যাংকসহ সব জায়গায় ভিড়। আর এতে নগরজুড়ে ছিল তীব্র যানজট। এই জট লেগেছিল রাত প্রায় আটটা পর্যন্ত।
সকাল ১১টায় জিইসি মোড় এলাকায় দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় মানুষের ভিড়। টাকা উত্তোলন, টাকা জমা দেয়া কিংবা ডিপিএসের কিস্তি জমা দেয়াসহ নানাবিধ প্রয়োজনে ব্যাংকে প্রচণ্ড ভিড়। সাড়ে ১১টার পর থেকে নগরে শুরু হয় তীব্র যানজট। দেওয়ানহাট মোড় থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত পুরো এলাকা ছিল যানজটে স্তব্ধ। দুপুর ২টার দিকে কদমতলী থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত পুরো এলাকাটি যেনো থমকে ছিল। এক ঘণ্টায় কদমতলী থেকে বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে আসা যায়নি। চকবাজার, আন্দরকিল্লা, টেরিবাজার, মোমিন রোড, জামাল খান, কাজির দেউড়ি, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট এলাকায় যানজট ছিল সীমাহীন। এসব এলাকা যানজট মুক্ত হতে সময়ও লেগেছে প্রায় ঘণ্টা দেড়েকেরও বেশি। যানজটে আটকে পড়ে অনেকে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছান। এছাড়া যানজটের কবলে পড়ে গণপরিবহনে আটকে থাকা যাত্রীদেরও দুর্ভোগের সীমা ছিল না। গাড়ির ভেতরে থাকা সকলেই গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকেন।
সরেজমিন দেখা যায় রাস্তায় বাস, ট্রাক, টেম্পু, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ইত্যাদি আটকে আছে তীব্র যানজটে। এ সময় যানজট সামলাতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া অনেক যাত্রী গণপরিবহণ চালকের বিরুদ্ধে বেপরোয়া চালানোর অভিযোগও করেন।
রাস্তায় গণপরিবহনের তুলনায় প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা বেশি ছিল। এ বিষয়ে ট্রাফিক (উত্তর) এর উপকমিশনার মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘লকডাউনের আগের দিন মানুষ নানা কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। অনেকের ধারণা, প্রয়োজনীয় কাজ ও কেনাকাটা আজ সারতে না পারলে আটকে যেতে পারে। এ কারণে মানুষ হয়তো ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আর এতেই নগরজুড়ে যানজট দেখা দেয়।’
মার্কেট ও শপিংমলগুলোর সামনে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল উল্লেখ করে ট্রাফিক (দক্ষিণ) এর উপকমিশনার নূর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, মানুষে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পাশাপাশি শপিংয়েও ব্যস্ত ছিল।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া নগর থেকে বাড়িতে চলে যাওয়ারও তাড়া ছিল মানুষের। আর এতে নগরীর বাস স্টেশনমুখী মানুষের চাপও ছিল।
এদিকে গতকাল বিকেলে নগরীর একেখান ও অলংকার এলাকায় দেখা যায়, বাড়িমুখী মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। মানুষ বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টারের সামনে এসে অপেক্ষা করছে। কিন্তু যানজটে বাস আটকা থাকায় নির্ধারিত গাড়ি এসে পৌঁছেনি।
গতকাল সকাল থেকেই নগরজুড়ে যানজটের চিত্র ছিল এমনই। এ সময় অফিসগামী যাত্রীরাও পড়েন বিপাকে। সকালের দিকে যানজট কিছুটা কম হলেও দুপুরের দিকে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে সন্ধ্যায় আবারও যানজট সৃষ্টি হয় নগরীর বিভিন্ন সড়কে। এ সময় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার থেকে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারির পর রাস্তায় গাড়ি ও যাত্রীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এছাড়া কেউ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন, কেউ ফিরছেন শহরে। এছাড়া অনেকে এক সপ্তাহের জন্য কাঁচাবাজার, ভোগ্যপণ্য কেনাকাটা করছেন। সবমিলিয়ে নগরের সড়কগুলোতে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক চাপের কারণে যানজট হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল সুপ্রভাতকে বলেন, লকডাউন নিশ্চিত হওয়ার পর রাস্তায় যানজট তীব্রতর হয়েছে। শহরমুখী ও গ্রামমুখী দু’দিকের যাত্রী বেড়েছে।
এদিকে টেরিবাজার, রেয়াজ উদ্দিনবাজারসহ অন্যান্য মার্কেট ও শপিং সেন্টারে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। মুদি দোকান থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার সবখানেই ছিল কেনাকাটার ধুম।