দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ঘরেই ধরা পড়ছে ডেঙ্গু রোগী। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সোমবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় মোট ২ হাজার ৮৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশের স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১১৮ জন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ পংকজ পাল জানান, জানুয়ারি থেকে গত সোমবার পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৬ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ২ হাজার ৫২১ জন ও ১৫৫ জন স্থানীয় বাঙালি। রোববার (১৬ জুলাই) পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ছিল ২ হাজার ২৩ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ছিল ১ হাজার ৯০৫ জন এবং ১১৮ জন ছিল স্থানীয় বাঙালি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয় ১৬৫ জন। এর মধ্যে ১০১ জন স্থানীয় বাঙালি আর ৬৪ জন রোহিঙ্গা। রোববার মোট আক্রান্ত ছিল ১৫০ জন। এর মধ্যে ৮৯ জন বাঙালি এবং ৬১ জন রোহিঙ্গা। সদর হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১২ জন বাঙালি ও ৩ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
পরিসংখ্যানবিদ পংকজ পাল আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাঁচটি এলাকা ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩ নম্বর ক্যাম্পে ৬২০ জন, ১৭ নম্বর ক্যাম্পে ১৭১ জন, ৪ নম্বর ক্যাম্পে ১৬৭ জন, ১ নম্বর ডব্লিউ ক্যাম্পে ১১৫ জন এবং ২৪ নম্বর ক্যাম্পে ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভায় ৩২ জন, চকরিয়ায় ২৭ জন, উখিয়ায় ২৬ জন, টেকনাফে ২৩ জন, সদরে ২০ জন এবং মহেশখালীতে ১৩ জন রোগী পাওয়া গেছে।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কো-অর্ডিনেটর ডা. আবু তোহা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অধিকসংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হলেও এটা উদ্বেগজনক বলা যাবে না। সচেতনতার কারণে আক্রান্তদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরছেন ৯৯ শতাংশ। মাত্র ৪ জন রোগী নানা কারণে মারা গেছেন।’
তিনি বলেন, ’ক্যাম্পে এখন অধিক সচেতনতা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ক্যাম্পে অবস্থিত বিভিন্ন ড্রেনেজ সিস্টেমে ব্লিচিং পাউডার নিয়মিত ছিটানো এবং এ বিষয়ে তদারকির জন্য ওয়াশ সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ক্যাম্পে হেলথ সেক্টরের সঙ্গে নিয়মিত সভা হচ্ছে। প্রতিটি ক্যাম্পের ব্লকের নেতা (মাঝি) এবং উপনেতাদের (সাব-মাঝি) সঙ্গে সভা করে জমানো পানি অপসারণ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত কিট সরবরাহসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু কমানো সম্ভব বলে আশা করা যাচ্ছে।’
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, ’সম্ভাব্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় কক্সবাজারের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে চিকিৎসার জন্য ১০ জন চিকিৎসক নিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে সদর হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো।’
২০২২ সালে কক্সবাজারে মোট ১৯ হাজার ২৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬৩৬ জন রোহিঙ্গা ও ৩ হাজার ৫৮৫ জন ছিল স্থানীয়। ওই বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৩৯ জন। যার মধ্যে রোহিঙ্গা ২৬ জন ও বাঙালি ১৩ জন।