ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। চট্টগ্রামে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও আক্রান্ত হয়েছে ১১১ জন। চলতি বছরে এটিই একদিনে ভর্তি হওয়া সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। তাই এটিকে জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট ঘোষণা দেয়া প্রয়োজন।
দিন দিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়েছে রোগী ভর্তির। যার কারণে সরকারিতো বটেই, ঠাঁই নেই অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালেও। প্রতিটি হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীতে মশার প্রজননস্থল হিসেবে ৪৩৩টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে। সেই হটস্পট এলাকায় সার্ভে শুরু করেছেন কীটতত্ত্ববিদরা। রোববার ( ৯ জুলাই) থেকে মশার বাসস্থান খুঁজতে ড্রোন ওড়াল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ড্রোন দিয়ে নগরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকার ৪০টি ভবন পর্যবেক্ষণে সাতটির ছাদে মিলেছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা। তাই ভবনগুলোর মালিককে ৮৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এছাড়া আরো একাধিক ভবনের ছাদে জমেছিল পানি। ওসব ভবন মালিককে সতর্ক করা হয়।
চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবন ও প্রকল্প এলাকাগুলোতে নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা এবং উৎস নির্মূলসহ সমন্বিত ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সমন্বয়হীনতা, যথাযথ পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞজনকে সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছিল না, তা বলাই বাহুল্য। আর যেটুকু উদ্যোগ দেখা গেছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় তা অপ্রতুল কিংবা লোক দেখানো প্রচারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক নির্ভরতার ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্যান্য সকল প্রকার পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে সিটি করপোরেশনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। মশক নিধনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ বছরব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সম্ভাব্য সব মাধ্যমে এডিস মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তার কার্যকর প্রচার বাড়ানো জরুরি। তা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করাসহ যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে জরুরিভিত্তিতে। এক্ষেত্রে রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবীসহ আগ্রহী অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ নিতে হবে।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সামাল দিতে দরকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়, যথাযথ পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর পদক্ষেপ।
এ মুহূর্তের সংবাদ