রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মিরসরাইয়ে ডেইরি ফার্মের বর্জ্যে উৎপাদন করা হচ্ছে বায়োগ্যাস। দৈনিক ৩০ ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। ওই প্ল্যান্ট থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে উপকৃত হবে এলাকার ২০টি পরিবার।
উপজেলার ওয়াহদেপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া গ্রামের গড়ে তোলা হয়েছে আলম ডেইরি ফার্ম ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। লন্ডনে বসে খামারের কর্মকাণ্ড দেখভাল করছেন প্রবাসী উদ্যোক্তা মো. পারভেজ।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া গ্রামের মো. আলমের ছেলে মো. পারভেজ প্রায় ২০ বছর আগে লন্ডন চলে যান। কিন্তু দেশের মায়া তিনি ছাড়তে পারেননি। তাই লন্ডনে আয়ের টাকায় গ্রামের বাড়িতে ২০১৮ সালে গড়ে তোলেন আলম ডেইরি ফার্ম। খামার দুটি দেখাশুনা করার জন্য রাখা হয়েছে ৪ জন লোক।
খামারের ম্যানেজার অরুণ নাথ জানান, তাদের খামারে বর্তমানে বিভিন্ন জাতের ৩৫টি গরু ও বাছুর রয়েছে। খামার থেকে প্রতিদিন দেড়’শ লিটার দুধ সীতাকুণ্ড উপজেলার একটি মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া এলাকায় মানুষকে তাদের চাহিদা মতো দুধ সরবরাহ করা হয়। ডেইরি ফার্মের পাশাপাশি প্রবাসী মো. পারভেজের পরামর্শে বর্তমান চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ধান। এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে সালমা এগ্রো।
খামারটি ঘুরে দেখা গেছে, খামারের গরুর বর্জ্য ফেলার জন্য ১০ ফুট ১০ ফুটের হাউজ করা হয়েছে। প্রতিদিন খামার থেকে বর্জ্যগুলো ওই হাউজে ফেলা হয় যাতে এলাকার পরিবেশ দূষণ না হয়। ওই হাউজ থেকে বর্জ্যগুলো বায়োগ্যাসের প্ল্যান্টে নিয়ে গ্যাস উৎপাদন করা হয়। চলতি সপ্তাহে প্ল্যান্ট থেকে বাড়িতে বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে জানিয়েছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের তত্ত্বাবধানে থাকা মো. আসিফ।
মোবাইলফোনে প্রবাসী মো. পারভেজ জানান, অনেকটা শখের বসে তিনি খামার দুটি গড়ে তুলেছেন। প্রবাসে থেকে কর্মচারীদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে খামার পরিচালনা করছেন। গো খাদ্যসহ জিনিপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখনও খামার থেকে লাভের মুখ দেখেননি। খামারের ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিমাসে প্রায় লোকসান দিচ্ছেন। ডেইরি ফার্ম ও সালমা এগ্রোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কমপক্ষে ১০টি পরিবারের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলে, খামার করার পর থেকে স্থানীয় কিছু মানুষের শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। খামারকে পরিবেশবান্ধব করে তোলের লক্ষ্যে বর্জ্যরে জন্য আলাদা হাউজ ও বর্জ্যগুলো দিয়ে ৩০ ঘনমিটারের বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করেছেন। প্ল্যান্ট থেকে এলাকার প্রায় ২০ পরিবার জ্বালানি পাবে। সম্প্রতি খামার দুটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিনও পরিদর্শন করে এসেছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো জাকিরুল হোসেন জানান, লন্ডন প্রবাসীর খামার দুটি পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এবং সরকারিভাবে নিবন্ধিত দুটি খামার। দেশের এ খামারগুলো দুধ ও মাংসের চাহিদা পুরণ করছে। কিন্তু ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স না দেয়ায় নিবন্ধন নবায়ন করা যায়নি। প্রবাসীদের এমন উদ্যোগে যেখানে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন সেখানে প্রবাসীর খামার দুটিকে ট্রেড লাইসেন্স কেন দেয়া হচ্ছে না বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করার ফলে পরিবেশ দূষণ কমার সাথে সাথে এলাকার মানুষও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে উপকৃত হবেন। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে বের হওয়া গোবরও জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন জানান, প্রবাসী উদ্যোক্তার খামার ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে। সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যককে ছোটখাট শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। খামারের বর্জ্যগুলো দিয়ে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে এদিকে যেমন নবায়নযোগ্যা জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশও দূষণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে।