বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের তোড়জোড়ে গতি মিলেছে, এখন ভারত ছাড়া আরো দুটি দেশ চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আমদানি ও উৎপাদনের ব্যাপারে অগ্রগতি হয়েছে সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক সিদ্ধান্তে। রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্মের করোনা ভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এতদিন টিকা সংগ্রহে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এবং কোভ্যাক্স থেকে সংগ্রহের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে অথচ দেশের ৮০ শতাংশ লোককে টিকা দিতে প্রয়োজন ২৬ কোটি ডোজ টিকা, এই বিপুল সংখ্যক টিকা বিভিন্ন উৎস থেকে পেতে যে দৌড়ঝাঁপের প্রয়োজন ছিলো তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কম। টিকা নিয়ে যে বৈশ্বিক কূটনীতি এবং ধনী দেশগুলি টিকা পেতে যে একচেটিয়া সুবিধা নিতে পারে, সে সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ বারবারই বলে আসছিলেন। করোনা শুরু হয়েছে ১ বছরেরও আগে, এই মহামারির কবে অবসান হবে তা অজানা। এখন বিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, কোন কোন দেশে তৃতীয় ঢেউ চলছে। ভাইরাসটি দ্রুত তার আচরণ পরিবর্তন করছে, বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের ধরণ তীব্র ও শক্তিশালী হচ্ছে। ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সর্বশেষ ভারতের ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বব্যাপী দুশ্চিন্তার কালো ছায়া ফেলেছে। এই বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ টিকা গ্রহণ এবং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের ক্রমঅবনতিশীল করোনা পরিস্থিতি আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশের মতো অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশে গবেষণার মাধ্যমে টিকা উদ্ভাবন পদ্ধতি বা অন্য দেশের উদ্ভাবিত টিকা প্রয়োগে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া যথার্থ ছিলো, তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের টিকা উৎপাদনে সক্ষমতা আছে। এ ব্যাপারে ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কথা বলা যেতে পারে। এই ইনস্টিটিউট থেকে ছয় ধরণের টিকা উৎপাদন হতো, যার মধ্যে ছিল গুটি বসন্ত, কলেরা, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড ও জলাতঙ্ক রোগের টিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক্রমে সংস্থাটি সব ধরণের টিকা উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
আমরা মনে করি চীন ও রাশিয়ার টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সাথে টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চীন, রাশিয়া, ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে টিকা আমদানির ব্যবস্থা করবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে।
টিকা কিনতে এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংক ৮ হাজার কোটি টাকা দেবে বলেছে, বিশ্বব্যাংক ও এ ক্ষেত্রে অর্থায়ন করবে, বাজেটে টিকা সংগ্রহে অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। তবে দেশে টিকা উৎপাদন করতে পারলে টিকা প্রাপ্তি সুলভ ও সহজ হবে। সুতরাং টিকা সংগ্রহ ও দেশীয়ভাবে টিকা উৎপাদনে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতরগুলি সমন্বয় করে জনস্বার্থে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুকÑএটি দেশবাসী চায়।
মতামত সম্পাদকীয়