টিকটক স্মার্টফোনের অ্যাপ। চীনের খ্যাতনামা সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স ২০১৪ সালে সাংহাই থেকে মিউজিক্যাল.লি নামে অ্যাপ তৈরি করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০১৬ সালে চীনে ডুইন নামের অ্যাপ ছাড়ে বাইটড্যান্স। ২০১৮ সালে মিউজিক্যাল.লি ও ডুইন এক করে নতুন নামে ছাড়া হয় টিকটক। টিকটক ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বিশ্বব্যাপী। তবে ডুইন এখনো রয়েছে । শুরু থেকেই এতে যে কেউ চাইলে ৫, ১০, ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও দিতে পারত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এখন দুই’আড়াই মিনিট পর্যন্ত দৈর্ঘ্যরে ভিডিও দেওয়া যায়।
টিকটকের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০ কোটি। ১৫৫টি দেশে ৪০টি ভাষায় চলে এটি। প্রতিদিন ১০০ কোটি ভিডিও দেখা হয়। কেতাবি ভাষায় টিকটিক হলো মাইক্রো ভøগিং (ভিডিও ব্লগ) অ্যাপ। এ বছরের প্রথম তিন মাসে টিকটক নামানো হয়েছে ৩১ কোটি ৫০ লাখ বার। তিন মাসে এত বেশি সংখ্যক অ্যাপ ডাউনলোডের বেলায় এটি রেকর্ড। বিজ্ঞাপন থেকেই মূল আয় টিকটকের। ২০১৮ সালে টিকটকের মুনাফা ছিল ৭৪০ কোটি ডলার। ২০১৮ সালেই মুনাফা দ্বিগুণের বেশি হয় (১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার)।
টিকটকের তুলনায় নতুন লাইকি। সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিগো টেকনোলজি তৈরি করেছে এটি। বিগো ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এটি বাজারে ছাড়ে। বিগোর মূল প্রতিষ্ঠান চীনভিত্তিক জয়। বর্তমানে প্রতি মাসে লাইকির সক্রিয় ব্যবহারকারী সাড়ে ১১ কোটি। ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ অ্যাপ ইমো ব্যবহারকারীরা সরাসরি লাইকি ব্যবহার করতে পারেন। আগে এর নাম ছিল লাইক। এখন হয়েছে লাইকি। গত বছরে ৮ কোটি ডলারের বেশি রাজস্ব আয় ছিল লাইকির। দুটি অ্যাপেরই জনপ্রিয়তার কারণ সহজে ভিডিও করা যায়, সম্পাদনা করা যায়, নানা রকম আবহ এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (নতুন কোনো বাস্তবতা যুক্ত করা) যোগ করা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও রয়েছে এই দুটি অ্যাপের। মূলত কম বয়সী ছেলেমেয়ে ও তরুণেরা এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে। ওবারলো ডটকমের এক পরিসংখ্যান বলছে, টিকটকের ৪১ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছর।
বাংলাদেশে এই টিকটক এবং লাইকি দুটিই জনপ্রিয়। এই দুটি অ্যাপ চালাতে বা ভিডিও দিতে খুব বেশি গতির ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় না। তাই ঢাকার বাইরে, এমনকি গ্রাম পর্যন্ত এদের ব্যবহারকারীরা ছড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশেও বছরখানেক আগে কয়েক দিনের জন্য বন্ধ হয়েছিল টিকটক। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে টিকটক বন্ধ করা হয়েছিল। আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না, এমন কিছু ভিডিও ছিল। এরপর টিকটক কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা কথা দেয় এমন ভিডিও থাকবে না।’ এই আশ্বাসের ভিত্তিতে টিকটক আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই টিকটক ও লাইকি এখন সামাজিক বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে সড়ক বন্ধ করে টিকটিক শুটিংকে কেন্দ্র করে ঢাকায় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। অপু নামে এক টিকটক নির্মাতাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। চট্টগ্রাম নগরেও সড়ক দখল করে টিকটক বানাতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। এতে সড়ক চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক সময় পার্কে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও জনাকীর্ণ স্থানে পূর্বানুমতি ছাড়া টিকটক ও লাইকির শুটিং করা হ”্ছ।ে এতেও বিরক্ত হচ্ছেন কেউ কেউ। নতুন প্রযুক্তির প্রতি তরুণদের আকর্ষণ থাকবে তা দোষের নয় তবে তা ব্যবহার করতে গিয়ে যেন কেউ মাত্রা ছাড়িয়ে না যায় এবং অন্যের বিরক্তির কারণ না হয়ে ওঠে সেদিকে লক্ষ রাখা একান্ত দরকার। আমরা মনে করি চট্টগ্রামে কোনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী বিষয়টির দিকে মনোযোগ দেবে।