পরীর পাহাড় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতি
নিজস্ব প্রতিবেদক »
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি। একইসাথে তা প্রত্যাহার না করলে আইনি পদক্ষেপ নেয়ারও কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে পরীর পাহাড়ে গড়ে উঠা চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির ভবনগুলো অবৈধ বলছে জেলা প্রশাসন। ১২ দশমিক ৯ শতক জায়গার বরাদ্দ নিয়ে ১ একর ৩৭ শতক ভূমিতে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে সমিতির বিরুদ্ধে। আবার যে জায়গাটি বরাদ্দ পেয়েছে তা দীর্ঘ ৪৪ বছরেও নিজেদের নামে সৃজন করেনি এবং খাজনাও প্রদান করেনি। এতে বরাদ্দকৃত জায়গাও এখন অবৈধ বলছে জেলা প্রশাসন।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ১২৮ বছরের একটি পেশাজীবী সংগঠন। কিন্তু চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের মান, মর্যাদা, সম্মান ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। যা অপমানজনক, মানহানিকর এবং পাশাপাশি উদ্দেশ্যমূলকও বটে। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির আওতাধীন জায়গার মালিকানা ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান মিথ্যাচার করছেন। ১৯৭৭ সালে লিজ দলিলমূলে চট্টগ্রাম কোর্টহিলে সরকারি খাস জমি সরকার কর্তৃক চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বরাবরে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরো বলেন, সমিতির ভবনগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুদানে নির্মিত হয়। অবৈধ ভবন হলে অনুদান দেওয়া হতো না। এছাড়া ভবনগুলো সিডিএ’রও অনুমোদিত। একইসাথে লিজ দলিল অনুসারে বরাদ্দপ্রাপ্ত আংশিক জমিতে চট্টগ্রাম স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতিকে জেলা প্রশাসন কর্তৃক লিজ দেয়া হলে আদালত আইনজীবী সমিতির পক্ষে রায় দেয়।
লিখিত বক্তব্যে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ২০১৪ সালে আইনজীবী ভবন নির্মাণের সময় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারদের উপস্থিতিতে জায়গা পরিমাপ করে কাজ শুরু করা হয়। একইসাথে নতুন দুটি ভবন নির্মাণেও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু এই ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে জেলা প্রশাসন বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত দপ্তরে পত্র প্রেরণ করছেন। এছাড়া গত ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের দৈনিক ও জাতীয় পত্রিকা সমূহে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। আদালত ভবনের চারপাশে সমিতির কোনো অবৈধ স্থাপনা নেই। দোকানপাট, খাবার হোটেল, মুদি দোকান, রাস্তার হকারসহ স্থাপনাগুলো জেলা প্রশাসন কর্তৃক লিজ প্রদানকৃত এবং কিছু অংশে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ কর্তৃক ভাড়া নেয়া হয়। যে ৩৫৩টি অবৈধ স্থাপনার কথা জেলা প্রশাসন কর্তৃক বলা হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। এছাড়া আদালত ভবন এলাকায় আমাদের কোনো ছাত্রাবাস নেই।
তবে আইনজীবী সমিতি কতটুকু জায়গা লিজ বরাদ্দ পেয়েছে এই তথ্যের বিষয়ে একাধিকবার জানতে চাইলেও সুপ্রভাতের প্রতিবেদককে তা জানাতে পারেননি সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে যারা ১৪৮৮৮ লিজ দলিল মূলে আইনজীবী সমিতি ১২ দশমিক ৯০ শতক জমি বরাদ্দ পেয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আইনজীবী সমিতির পাঁচটি ভবন নির্মাণে এক একর ৩৭ শতক জায়গা দখল করা হয়েছে। সেই হিসেবে এক একর ২৪ শতক জমি অবৈধ।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি ১২ দশমিক ৯০ শতক জমি লিজ পেয়েছিল। জেলা প্রশাসন বলছে, ১১টি শর্ত মানা হয়নি। শর্ত অনুযায়ী ২টি কিস্তির মাধ্যমে কালেক্টর তথা জেলা প্রশাসককে রেন্ট দিতে হবে। লিজ দলিলের ৩ নম্বর শর্তে বলা আছে, লিজ গ্রহীতা তথা আইনজীবী সমিতি যদি ১২.৯০ শতক জমির রেন্টের কোনো কিস্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে বকেয়া ভাড়ার উপর ৬.২৫ শতাংশ হারে সুদসহ বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে। আইনজীবী সমিতি সেই লিজ দলিলের ২ নম্বর শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে লিজ দলিলটি বাতিলযোগ্য।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, ‘আমি জেনেশুনেই বলেছি এসব ভবন অবৈধ। লিজ দলিলের শর্ত না মানলে তা আর বৈধ থাকে না। একইসাথে আইনজীবী সমিতির ভবনের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ঝুঁকিতে রয়েছে। আরেকটি রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি অপেক্ষা করছে।’
উল্লেখ্য, আইনজীবী সমিতি ও জেলা প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে গত কিছুদিন ধরে। পরীর পাহাড়টি পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের কথা অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এই পাহাড় ঘিরে অসংখ্য স্থাপনায় পাহাড়ের সৌন্দর্য যেমন বিনষ্ট হচ্ছে তেমনিভাবে পাহাড়ের নিচের স্থাপনাগুলোর ঝুঁকি বাড়ছে। গতকাল সকালে আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে সমিতির বক্তব্য উপস্থাপন করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এসময় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক, সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বদরুল আনোয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনতোষ বড়ুয়া, আব্দুর রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।