করোনা ভাইরাস ও আর কোনো বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন শিল্পোন্নত ৭টি দেশের জোট জি-৭ এর নেতৃবৃন্দ। ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালের কারবিস খাঁড়িতে নেতাদের বৈঠকে নেওযা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, টিকা উদ্ভাবন ও অনুমোদনের সময়সীমা ১০০ দিন করা, সম্ভাব্য সংক্রামক রোগের আবির্ভাবের ওপর নজরদারি শক্তিশালী করা, জিনোম সিকেয়েন্সের সক্ষমতা বাড়ানো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংস্কার ও একে শক্তিশালী করা। কোভিড টিকা নিয়ে যে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় আগামী বছরের মধ্যে ১০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার কথা ঘোষণা করা হয়। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বকে টিকায়িত করার কথা বলা হয়। বিশ্বকে ঝুঁকিমুক্ত করতে অন্তত ১ হাজার কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন বলেও মত প্রকাশ করা হয়। তবে এ পর্যন্ত উৎপাদিত হওয়া আড়াইশ কোটি টিকার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ধনী দেশগুলি কিনে নিয়েছে, যারা বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ।
জিÑ৭ অর্থাৎ ধনশালী দেশগুলির সম্মেলনে বিশ্বের মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বললেও তাদের কার্যক্রমে এর বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় না। টিকাকে বৈশ্বিক পণ্য ঘোষণার দাবি সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি, যেখানে করোনা কিংবা যে কোনো মহামারি মোকাবিলায় সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করার ওপর জাতিসংঘ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জোর দিয়ে আসছে, সেখানে ধনী দেশগুলি নিজেরাই আলাদাভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। চীন ও রাশিয়াসহ জিÑ২০ গুলির দেশগুলোকে যুক্ত করার দাবি ব্রিটিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন তুলেছেন। তার কোন আভাস জিÑ৭ নেতাদের কাছ থেকে এখনো মিলছে না অথচ বিশ্বকে মহামারির বিপদ থেকে রক্ষা করতে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। বরং দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে যা এ মুহূর্তে বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর। উল্লেখ্য, জিÑ৭ দেশগুলি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি ও জাপান। তবে জিÑ৭ নেতাদের বৈঠকের আলোচনায় ইতিবাচক দিকও রয়েছে।
বিশ্বের সকল দেশ যদি টিকা না পায় তবে মহামারি রোধ করা সম্ভব নয়। সকল দেশ নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কোন দেশই নিরাপদ নয়, তা ধনী দেশগুলিকে উপলব্ধি করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, ধনী দেশগুলি টিকা ও স্বাস্থ্য কার্যক্রম নিয়ে রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করছে। যুক্তরাজ্যের দারিদ্র্যবিরোধী নাগরিক সংগঠন ওয়ান এর প্রধান লিজ ওয়ালেস বলেছেন, টিকা ভাগাভাগির কাজটি কোথাও তাড়াতাড়ি হচ্ছে না, এটা এখনই হওয়া দরকার।
চীন ও রাশিয়ার টিকা দেরিতে অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। টিকা নিয়ে বৈশ্বিক কূটনীতিও আছে। বিশ্বসংস্থার উচিত চীন ও রাশিয়ার টিকাসহ ‘কোভ্যাক্স’ এর মাধ্যমে বিশ্বের সকল দেশের জন্য টিকা সরবরাহ কার্যক্রম জোরদার করা। এটি মনে রাখতে হবে যে বিশ্ব অর্থনীতি ও মানুষের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম সফল করতে অন্তত প্রতিটি দেশের ৭০-৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে দ্রুত। আমরা মনে করি, বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত সব দেশের মানুষকে টিকা দিতে টিকা প্রস্তুতকারী দেশ, জাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা উদ্যোগ নেবে। ধনী দেশগুলিকে রক্ষণশীল মনোভাব কাটিয়ে উঠতে এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সকল দেশকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। করোনা পরিস্থিতি বিশ্ববাসীকে যে পরিস্থিতিতে নিক্ষেপ করেছে তাতে বিশ্ববাসীর ঐক্য ও সহযোগিতা ছাড়া অন্য পথ নেই।
মতামত সম্পাদকীয়