নিজস্ব প্রতিবেদক »
টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। গতকাল শনিবার (৫ আগস্ট) চলতি বছরের দ্বিতীয়বারের মতো পানিবন্দি হয়েছে নগরের হাজারো মানুষ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে কেউ বের হচ্ছেন না। আর বের হলেই কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে।
আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত এভাবে টানা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এ প্রসঙ্গে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, গতকাল (শনিবার) থেকে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ৬৬.৩ মিলি মিটার, আমবাগান আবহাওয়া অফিসে ৭৩ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আজ (শনিবার) রাত থেকে বৃষ্টি পরিমাণ আরও বাড়বে। যেটা আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ৯ আগস্ট থেকে তা কমে যাবে। তবে একেবারে বৃষ্টি কমবে না।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নগরের নাকাল অবস্থা। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত হাঁটুর উপরে পানি। কোমর সমান পানি জমেছে মোহাম্মপুর এলাকার গলিসহ আশেপাশের গলিতে। সেখানে যানবাহন তেমন একটা চলছে না দেখা যায়নি। রিকশাতে তিন-চার গুণ ভাড়া নিয়ে মূল সড়কে আসছেন চাকরিজীবীরা। তবে মূল সড়কে যেন রক্ষা নেই। পানিতে সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ অনেক যানবাহন বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সড়কের দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়েছে। পানি ঢুকেছে বহদ্দারহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি ভবনের নিচ তলায়ও। মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ির সামনের সড়কে কোমর সমান পানি। তিনিও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া নগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর, চকবাজার, ষোলশহর, হালিশহর, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, বলিরহাট, ছোট পুল, বড় পুল, মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, কাতালগঞ্জ, ষোলশহর ২নম্বর গেট এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জনসাধারণ।
চকবাজার মুুন্সিপুকুর পাড়ের বাসিন্দা ব্যারিস্টার ইব্রাহিম রহমান বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আমাদের গলিতে হাঁটুর উপরে পানি। কোনোভাবে পানি কমছে না। কমে গেলে আবার ভারি বৃষ্টি হয়ে পানি জমে। আমার সন্তানরাও কোচিং সেন্টারে যেতে পারছে না। শুধু আমার পরিবার নয়, পুরো এলাকাটি যেন পানির কাছে অসহায়। প্রতি বছরই এমন হয়। কিন্তু বছরের পর বছর কোনো সমাধান পাওয়া যায় না। আর কত বছর এই অসহনীয় দুর্ভোগ ভোগ করতে হবে জানি না।’
এদিকে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কায় পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে চট্টগ্রাম প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। একইসঙ্গে খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক। তিনি বলেন, প্রবল বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় সকাল থেকে মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় বসবাসরত লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। মহানগরে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে তারা সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন।’