এ ধরনের খবর ভিত্তিহীন : চীন
সুপ্রভাত ডেস্ক »
ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়ার জন্য রাশিয়া চীনের কাছে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তার বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সঙ্কটে পড়া অর্থনীতি সচল রাখতে বেইজিংয়ের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে মস্কো।
রাশিয়ার এই সাহায্য চাওয়ার গোয়েন্দা তথ্য কীভাবে পাওয়া গেল, তা গোপন রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। মস্কো কী ধরনের অস্ত্র বা সামরিক সহায়তা চেয়েছে সে বিষয়েও বিস্তারিত বলতে চাননি তারা।
মাসখানেক আগেই রাশিয়ার প্রসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও চীনের প্রসিডেন্ট শি জিনপিং দুই দেশের মধ্যে একটি ‘সীমাহীন বন্ধুত্বের’ চুক্তি করেন। ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লেও চীনের সঙ্গে তাদের পণ্য বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবে চলছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন চীনের পদক্ষেপের ওপর কড়া নজর রাখছে।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সোমবার রোমে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় বৈদেশিক বিষয়ক কমিশনের পরিচালক ইয়াং জাইচির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
সুলিভান এই বৈঠকে ইয়াংকে সতর্কবার্তা দেবেন, চীন যদি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে রাশিয়াকে শক্তি যোগায়, তাহলে পরিণতি ভালো হবে না।
রোববার সিএনএনকে সুলিভান বলেন, ‘বেইজিংয়ের সঙ্গে আমরা সরাসরি যোগাযোগ করছি এটা জানাতে যে অবরোধের প্রভাব বিস্তৃত পরিসরে কমবে- এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে কিংবা রাশিয়াকে সহায়তা করা হলে সেজন্য তাদের মাশুল গুণতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অন্য কোনো দেশ থেকে রাশিয়া এই মুহূর্তে তাদের ওপর আরোপিত অবরোধকে অবজ্ঞা করার মতো সহায়তা পাক, আমরা সেটা হতে দিতে পারি না এবং দেব না।’
চীনের কাছ থেকে রাশিয়া ঠিক কী ধরনের সামরিক সহায়তা চেয়েছে তা স্পষ্ট করেননি সুলিভান, তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন।
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেনগিউ বলেছেন, রাশিয়ার কাছ থেকে সহায়তা চাওয়ার কোনো অনুরোধ তিনি কখনোই শোনেননি। বেইজিং চলমান সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।
‘ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্যই কষ্টদায়ক। এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত উত্তেজনা প্রশমিত করার ওপর, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয় বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।’
রাশিয়াকে সহায়তা অব্যাহত রাখলে এবং তাদের পক্ষ নিলে বেইজিংকে কী ধরনের শাস্তির মুখে পরতে হতে পারে তার একটি রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করছে জো বাইডেনের প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা বলছেন, এতে হয়ত মস্কোকে সহায়তা করার বিষয়ে বেইজিংকে নিরুৎসাহিত করা যাবে। চীনের নেতারা হয়ত মুখেমুখে মস্কোকে সহায়তা করার কথা বলে যাবেন, কিন্তু বাস্তবে হয়ত নিজেদের এই যুদ্ধে জড়িয়ে বিপদ বাড়ানোর পথ এড়ানোর চেষ্টা করবেন।
সুলিভান বলছেন, চীন হয়ত এই অভিযান শুরুর আগেই জানত যে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছেন। তবে রুশ নেতার পরিকল্পনার পুরোটা সম্পর্কে হয়ত তাদের ধারণা ছিলো না।
‘এটা খুবই সম্ভব যে পুতিন তাদেরকেও মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন, যেমনটি তিনি ইউরোপের নেতাদেরও দিয়েছেন।’
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, শি জিনপিং এ পর্যন্ত ৩৮ বার ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, অন্য যে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ে এটা অনেক বেশি, এবং দুই নেতাই চান আমেরিকার শক্তি খর্ব করতে।
বরাবার চীনই রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনে থাকে, রাশিয়া নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া চীনে সমরাস্ত্র রপ্তানি বাড়িয়েছে। তবে চীনের উন্নততর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তি রয়েছে, যা ইউক্রেন অভিযানে রাশিয়ার কাজে আসতে পারে।
রোববার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পশ্চিম ইউক্রেনের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। তবে স্বতন্ত্র বিশ্লেষকদের ধারণা, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ কমে আসছে।
গত কিছুদিন ধরে চীনের কূটনীতিক, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সরকারি সংস্থাগুলো একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এই তথ্য প্রচার করেছে যে ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র তৈরিতে অর্থায়ন করে আসছে ওয়াশিংটন।
ওয়াশিংটনের অর্থায়নে ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনার বিষয়ে প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশন আহ্বান করে রাশিয়া। জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন তার রুশ মিত্রকে এ বিষয়ে সমর্থন দেন।
এদিকে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে চলমান আলোচনাতেও জড়িত চীন, যা বর্তমানে রাশিয়ার নতুন দাবির মুখে স্থগিত হয়ে আছে। চুক্তির আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে রাশিয়া শর্ত দিয়েছে, ইরানের সঙ্গে তাদের লেনদেন চলমান অবরোধ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। তবে এই শর্ত মানতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন কর্মকর্তারা এখন এটা বোঝার চেষ্টায় আছেন যে ইরানকে ঘিরে এই আলোচনায় ঠিক কোন মাত্রায় রাশিয়ার অবস্থানকে সমর্থন করবে চীন।
রাশিয়ার নতুন এই অনুরোধ আসার আগ পর্যন্ত সবপক্ষ মোটামুটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে করা চুক্তিটি পুনর্বহালের অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। যে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বের হয়ে আসেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে। সোমবার ইয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ইরানের বিষয়টিও তুলতে পারেন সুলিভান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ সামনে রেখে রোমের এই বৈঠক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসন্ন বছরগুলোতে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে যাচ্ছে রাশিয়া ও চীনের সম্মিলিত শক্তি।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ওবামা প্রশাসনের সময়কার জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ইভান মেডেইরোস বলেন, ‘(আন্তর্জাতিক) সম্পর্কে একটা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবত একটি স্মরণীয় মুহূর্ত হতে যাচ্ছে। আমার ধারণা, রাশিয়াকে এই আগ্রাসনে সহায়তা করার বিষয়ে চীনকে কতোটা ক্ষতি এবং কী ধরনের পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে তার একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্র।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে হয় না বাইডেন প্রশাসনে কেউ এমন কোনো বিভ্রান্তির মধ্যে আছে যে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে রাশিয়া থেকে দূরে রাখতে পারবে।’
রাশিয়া প্রসঙ্গে চীনকে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানো রাশিয়াকে সহায়তা করলে চীনকে কঠিন ‘পরিণতির’ মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাতে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পর রাশিয়া চীনের কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন অনামা মার্কিন কর্মকর্তারা।
কথিত রাশিয়ার ওই অনুরোধের বিষয়ে তারা কিছু জানেনা বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনস্থ চীনা দূতাবাস।
সোমবার রোমে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় বৈদেশিক বিষয়ক কমিশনের পরিচালক ইয়াং জাইচির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। তার আগে এ সতর্কতা জানালো ওয়াশিংটন।
রাশিয়ার অস্ত্র সহায়তা চাওয়ার খবর ভিত্তিহীন : চীন
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে রাশিয়া চীনের কাছ থেকে অস্ত্র সহায়তা চাওয়ার যে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র করেছে, তাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো আহ্বান কিংবা অনুরোধ এখন পর্যন্ত আসেনি বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিয়্যু পেংগ্যিউ।
রয়টার্সকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। আমরা এখনও এ ধরনের কোনো সহায়তার অনুরোধ (রাশিয়ার কাছ থেকে) পাইনি।’