করোনায় সামনের সারির যোদ্ধা #
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চার মাসের বাচ্চাকে বাসায় রেখে করোনা চিকিৎসায় নিজেকে যুক্ত করতে যাচ্ছেন ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা। মা ও শিশু হাসপাতালের এই চিকিৎসক এবং সংগঠক লায়ন মাহমুদুর রহমান শাওন দম্পতির ঘরে জন্ম হয় গর্ভের সাত মাস বয়সী শিশু। সিজারিয়ানের মাধ্যমে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া সেই শিশুর ওজন ছিল মাত্র ১২০০ গ্রাম। এখনো মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকলেও সেই ছুটি বাতিল করে করোনা ওয়ার্ডে কাজে যোগদানের জন্য আবেদন করেছেন মাহমুদা চৌধুরী।
একইসাথে তিনি করোনা ওয়ার্ডে কাজ করতে চেয়ে হাসপাতাল বরাবর একটি আবেদন করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৮ জুন থেকে কাজে যোগদানের কথা রয়েছে তার।
মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকার পরও সেই ছুটি বাতিল করে কাজে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা চিকিৎসায় আমাদের খুব প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজনের সময় নিজের কথা ভেবে বাসায় বসে থাকতে চাই না। এজন্য কাজে যোগদানের জন্য আবেদন করলাম।
আপনি ছিলেন জেনারেল সার্জারি ওয়ার্ডের মেডিকেল অফিসার, এখন কাজ করতে চাচ্ছেন করোনা ওয়ার্ডে। কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে রোগীর পরিমাণ বেশি। আর আইলোসেন সংক্রান্ত কারণে একজন ডাক্তার ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে পারবে না। তাই এই ওয়ার্ডে এখন অনেক ডাক্তারের প্রয়োজন। আমি ২০১৬ সালে এমবিবিএস পাস করে ২০১৮ সালে এখানে যোগদান করি। তাই আমি মনে করছি আমাকে রোগীদের সেবা দিতে প্রয়োজন। সেই চিন্তা থেকে কাজ করতে আসা।’
চার মাসের প্রিম্যাচুইরড বাচ্চাকে (আজমাঈন রহমান জেইন) বাসায় রেখে কাজে যোগদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. মাহমুদা সুলতানার স্বামী ও একই হাসপাতালের কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান শাওন বলেন, ‘সে ( মাহমুদা) বলে ডাক্তারি শিখে যদি এই দুর্যোগের সময় মানুষকে সেবা দিতে না পারি তাহলে আর এই শিক্ষার মূল্য কি রইলো? এছাড়া যেসব বাচ্চার মা নেই, তারা যেভাবে বেঁচে থাকে প্রয়োজনে আমার বাচ্চাও বেঁচে থাকবে। এসব কথা শুনে আমি আর না করতে পারিনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল উদ্বোধন হলেও শুধুমাত্র ডাক্তাররা চিকিৎসা দিতে রাজি হননি বলে এখনো চালু করা যায়নি। এছাড়া অনেক হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তারগণ চিকিৎসা দিতে আসছে না। এমনকি মা ও শিশু হাসপাতালেও সিনিয়র ডাক্তারদের অভাব রয়েছে। করোনার ভয়ে সামনের সারির এসব যোদ্ধাদের অনেকে পেছনের দিকে রয়েছেন। সেই দিক থেকে ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা ব্যতিক্রম বলে জানান মা ও শিশু হাসপাতালের কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম আজাদ। তিনি বলেন, ‘ডা. আফরোজার চার মাস বয়সী একটি শিশু রয়েছে, শিশুটি বুকের দুধ পান করে। তারপরও সে ছুটি বাতিল করে কাজে যোগদানের জন্য আবেদন করেছে। আমরা তার আবেদনটি বিবেচনা করবো। কিন্তু তার এই এগিয়ে আসা অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। এভাবে যদি অন্য চিকিৎসকরা এগিয়ে আসে তাহলে আমরা রোগীদের আরো বেশি সেবা দিতে পারবো।’
উল্লেখ্য, মা ও শিশু হাসপাতাল করোনা চিকিৎসা সেবা শুরু করেছে। প্রথমদিকে তারা ৩০টি শয্যা দিয়ে চিকিৎসা সেবা শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে শয্যা। এছাড়া চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে একমাত্র মা ও শিশু হাসপাতাল সর্বাধিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। অপরদিকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল মনোনিত হলেও এখনো রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি এসব হাসপাতালে।
এ মুহূর্তের সংবাদ