চমেকে বন্ধ হচ্ছে না দালালের দৌরাত্ম্য

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বন্ধ হচ্ছে না দালালের দৌরাত্ম্য। নতুন রোগী ভর্তি হলেই ওৎ পেতে থাকে তারা। পুলিশি অভিযান- ধরাপাকড় চললেও বন্ধ করা যাচ্ছে না তাদের তৎপরতা। আর এসব দালালদের কারণে রোগীদের পড়তে হয় নানা ভোগান্তির মুখে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার আদনান সিকদার (২২) নামে আরও এক দালালকে আটক করা হয়। এ নিয়ে অক্টোবরে মোট ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। শাস্তি কম থাকায় আসামিরা পার পাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চমেক পুলিশ ফাঁড়ির সূত্রে জানা যায়, অক্টোবর মাসে ১০ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ১ অক্টোবর জুয়েল (৫০), ৪ অক্টোবর সবুজ (২৫), ১৬ অক্টোবর মো. সুমন (২২), ১৭ অক্টোবর মো. মইন উদ্দিন (৩২) রয়েল দে (২৭), ২৫ অক্টোবর আলম বাবু (৪১), মো. জিসান (২৪), মো. ফরহাদ (৩৪), মো. জুয়েল (২৩) ও সর্বশেষ গতকাল ৩১ অক্টোবর আদনান সিকদারকে (২২) আটক করা হয়। যাদের বেশির ভাগ গাইনি ওর্য়াড এবং জরুরি বিভাগ থেকে আটক করা হয়।

গাইনি ওয়ার্ডে দালাল বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, ‘গাইনি ওয়ার্ডটিতে প্রতিদিন ১ শ’র মতো রোগী ভর্তি হন। রোগীকে ইমারজেন্সি সেবা প্রদান করা হয়। গর্ভবতী নারীদের সন্তান প্রসব হওয়ার সাথে সাথেই রক্ত, ওষুধসহ অনেক জিনিসের দরকার হয়। অনেক রোগীর অভিভাবক কোথায় কি পাওয়া যায় তা জানে না। আর সে সুযোগ কাজে লাগায় দালাল চক্র। রোগীদের নানাভাবে ফুঁসলিয়ে বিরাট অর্থ হাতিয়ে নেয় তারা।

ওষুধ এনে দেয়ার নাম করে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর ফেরত আসেনা এমনও খবর পেয়েছি আমরা। কিন্ত আমাদের তো এখানে কিছু করার নেই। তবে রোগীদের সর্তক করে দিই আমরা। এখানে কোন পুরুষকেও প্রবেশ করতে দিই না’। যা হয় ওয়ার্ডের বাইরে বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কর্তব্যরত আনসারদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘দালাল নির্মূূলে সর্বপ্রথম জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা পুরো হাসপাতাল জুড়ে ৫০০ পোস্টার টাঙিয়ে দিয়েছি। দালালের মুখে পড়লে সরাসরি কল করে সেবা নিতে পারবে রোগীরা। কিন্তু এত কিছু করার পরেও কমছে না দালালের সংখ্যা। হাসপাতালের রোগী ভর্তির ধারণ ক্ষমতা যতটুকু, তার থেকে তিনগুণ রোগীকে আমরা সেবা প্রদান করছি। যার ফলে নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটছে।

হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে একজন দালাল পাচ্ছে বড় অংকের টাকা। যেখানে কোনো যোগ্যতার দরকার নেই। রোগী ভাগাতে পারলেই মেলে হাজার হাজার টাকা। আর এসব চক্রের সাথে বড় একটি সিন্ডিকেট জড়িত। ’

তিনি আরো বলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরো বাড়ানোর পাশাপাশি শাস্তি, জেল, বড় অংকের জরিমানা করা গেলে দালালদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যেতো।’

দালালদের প্রসঙ্গে পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বলেন, ‘দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী হাসপাতালের দালালদের সাজা নেই বললে চলে। শুধু মাত্র জরিমানা করা হয়। যে টাকার পরিমাণ ৫০০ টাকার উপরে হয়না। তাই তারা পার পেয়ে যায়। আটক হওয়ার পর ছাড়া পেয়ে আবার একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। তবে আমাদের তরফ থেকে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে’। অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।