মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি, চন্দনাইশ <<
করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চন্দনাইশে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের বেডে জায়গা না থাকায় রোগীরা ঠাঁই নিয়েছেন হাসপাতালের মেঝেসহ আশপাশের বারান্দায়।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসকরা। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে বিছানা সংকুলন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাদের হাসপাতালের মেঝে, বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে হঠাৎ এই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আচমকা গরমের জন্য।
চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ছয় দিন ধরে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় মোট প্রায় ৩৫ জন ডায়রিয়া রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় ২৫ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ১০ জন। প্রতিদিনই গড়ে ১০-১২ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অন্যদিকে দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে এ সময় পর্যন্ত মোট প্রায় ৭০ জন ডায়রিয়া রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় ৫৫ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৫ জন। প্রতিদিনই গড়ে ১৫ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বলে জানান। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। তাদের বেশির ভাগই বাজারের খোলা ও অস্বাস্থ্যকর পচা-বাসি খাবার খাওয়ায় এবং আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে হঠাৎ গরম পরায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে খাবার স্যালাইনের সংকট না থাকলেও পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে সংকট দেখা দিবে না বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
রোববার ও সোমবার দুপুরে সরেজমিন চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য কোন আলাদা বেড না থাকলেও কর্নার রয়েছে। এ হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩৫-৪০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে আরো প্রায় ১০০-১২০ জন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। অপরদিকে দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে প্রায় ৭০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে আরো প্রায় ৪০-৫০ জন। প্রতিদিন ১৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ দুই হাসপাতালে বেডের অপ্রতুলতার কারণে বাধ্য হয়ে রোগীরা মেঝেতে অবস্থান নিয়েছেন। কঠোর লকডাউনের কারণে যানবাহনের অভাবে গ্রাম থেকে রোগীরা হাসপাতালে আসতে নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। করোনার ভেতর ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
উপজেলার গাছবাড়িয়া এলাকার লায়লা বেগম বলেন, শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। প্রথমে বাড়িতে চিকিৎসা নেই। কোনো পরিবর্তন না দেখে রাতেই হাসপাতালে চলে আসি। কিন্তু হাসপাতালে এসে দেখি কোনো সিট নেই। রোগের কারণে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি।
চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবু রাশেদ মোহাম্মদ নুরুদ্দিন ও দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক ও কলেরা স্যালাইনের কোনো সংকট নেই। গ্রামে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, হাসপাতালে রোগীর স্রোত চন্দনাইশ উপজেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি উপজেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। গ্রামের লোকজন ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তন কারণ হতে পারে। ডায়রিয়ার কারণে অত্যাধিক পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা ও বমি হয়। এমন উপসর্গ দেখা দিলে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে বেশি করে। ডাবের পানি খাওয়ানো যেতে পারে। রোগীর অবস্থা ভালো মনে না হলে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন ও খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি অন্যান্য ওষুধ রয়েছে। আক্রান্ত রোগীকে বিশুদ্ধ পানি পান ও নিরাপদ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি শিশু ও বয়স্কদের নিরাপদে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এ দুই হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়ে চলছে। এতে সাধারণ মানুষের ভীতি হওয়ার কোন কারণ নেই। ডায়রিয়ার কারণ হিসেবে মনে করছি, মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সিজনাল ভাইরাস আর ভ্যাপসা গরম এর জন্য দায়ী। সবাই যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এ থেকে মুক্তি পেতে পারি।