সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রামে গত দুদিনে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কমে এলেও গত এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মাসে টানা বৃষ্টি না হওয়ায় এইডিস মশার প্রকোপ বাড়ছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। খবর বিডিনিউজের।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসেবে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় এখন মোট ১৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৬১ জন, শিশু ৪৬ জন, নারী ৪২ জন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বুধবার নতুন ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে সেখানে ৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত জানান।
সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন শনাক্ত হয়েছে। এর আগে ২৯ অগাস্ট ১২ জন শনাক্ত হয়েছিল।
‘আক্রান্তদের চিকিৎসায় আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হচ্ছে মশার কামড় থেকে নিজেদের রক্ষা করা। যাতে এইডিস মশা না জন্মায়, সেজন্য বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা।’
এর আগে ২৭ অগাস্টের প্রতিবেদনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ২ জন এবং ২৫ অগাস্টের প্রতিবেদনে ৫ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছিল সিভিল সার্জন কার্যালয়।
জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস বলেন, ‘বর্ষার শুরু থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এইডিসের প্রাদুর্ভাব থাকে। তাই বছরের এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
‘তবে এখন আবহাওয়ার কারণেও এটা প্রভাবিত হচ্ছে বলে ধারণা করছি। টানা বৃষ্টি হচ্ছে না। কিন্তু ৫-৬ দিন আগে সকালের দিকে কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছিল। এতে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেছে। জমে থাকা পানিতে এইডিসের ডিম থাকলে তা বংশবৃদ্ধি করবে। একটানা বৃষ্টি হলে মশার ডিম মরে যেত। সেটা হচ্ছে না।’
এনতেজার ফেরদৌস জানান, চলতি সপ্তাহে যে রোগী শনাক্তের তথ্য আসছে এর মধ্যে নারী ও শিশুরা বেশি।
অন্যদিকে প্রায় প্রায় আড়াই সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ার পর গত দুদিন ধরে তা কিছুটা নি¤œমুখী।
মূলত নগরীর ইপিজেড, সল্টগোলা, হালিশহর ও পতেঙ্গা এবং সংলগ্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। শুরুতে ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে দিনে গড়ে ৫০-৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছিলেন।
বুধবার ও মঙ্গলবার এ সংখ্যা ছিল ২০ জন। তার আগে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জন নতুন ডায়রিয়া রোগী ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। আর চমেক হাসপাতালে বুধবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন।
বিআইটিআইডি-এর সহযোগী অধ্যাপক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে বছরের অন্যান্য সময় দিনে ১৫-২০ জন রোগী ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়। গত ২ দিন ধরে ২০ জন করে রোগী আসছে।
‘এভাবে টানা ৫-৭ দিন যদি এই সংখ্যা এমন থাকে, তাহলে বলা যাবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব কমছে। এখনও যে রোগীরা আসছেন তাদের বেশিরভাগ ইপিজেড, সল্টগোলা, হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।’
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসেবে, জেলার ১৫টি উপজেলায় গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৬০ জনের মত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘বছরে কোনো একটি অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ২-৫ শতাংশ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। আমাদের উপজেলাগুলোতে জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে বর্তমানে যে আক্রান্তের সংখ্যা তা আশঙ্কাজনক নয়।
‘আর নগরীর কয়েকটি এলাকায় যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে সে বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাত সদস্যের একটি দল নমুনা নিয়ে গেছে। তবে তাদের অনুসন্ধানে কী পেয়েছে সে বিষয়ে এখনো আমাদের জানানো হয়নি।’