চট্টগ্রাম বোর্ডে কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫

এইচএসসির ফল

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে গতবছরের তুলনায়।

ফলাফলের বিষয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমান সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘২০২০ সালের পুরোটাই আমরা করোনার কবলে ছিলাম। সে সময়ে বিশেষ বিবেচনায় পাস দেয়া হয়। পরে ২০২১ সালে তিনটি পরীক্ষার পাশাপাশি জিএসসি, এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। ২০২২ সালে পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়। এ সময়ে পরীক্ষার্থীরা যতটা সুযোগ সুবিধা পেয়েছে পরবর্তীতে তা আর তারা পায়নি। এছাড়া এবার আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। সবকিছু মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ পড়ায় এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে।’
চট্টগ্রাম বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ২৭৯টি কলেজের ১ লাখ ৩ হাজার ২৪৮ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেয়। এরমধ্যে পাস করেছে ৭৫ হাজার ৯০৩ জন। উপস্থিতির সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৯৪৯ জন। পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৩৩৯ জন। গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৬৭০ জন। এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরাই ভালো ফলাফল করেছে। ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ২৪ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৮৮৫ জন। ছাত্রীদের পাসের হার ৭৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৪৫৪ জন।
তিনটি শাখার মধ্যে বিজ্ঞানে ৮৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মানবিকে পাস করেছে ৬৫ দশমিক ২২ শতাংশ।
এবছর এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ১৫ হাজার ৯১২ জন। এবার চট্টগ্রামে শতভাগ পাস করা মোট কলেজের সংখ্যা ১২টি; যা গত বছর ছিল ১৬টি। এছাড়া চলতি বছর বহিষ্কৃত হয়েছে ১৫ জন পরীক্ষার্থী।
চট্টগ্রামের ৩টি কলেজে এবার কোনো পরীক্ষার্থীই পাশ করে নি। কলেজগুলো হলো- চান্দগাঁওয়ের ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ। এ কলেজের ২১ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও নিয়ে কেউই পাস করতে পারেনি। অন্যটি মহালছড়ির বৌদ্ধ শিশু গড় স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেখানে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৭ জন। অপর প্রতিষ্ঠানের নাম মাটিরাঙা মিউনিসিপ্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেখানেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ জন।

পাহাড়েও কমেছে পাসের হার

পাহাড়ে ৩ জেলাতেও এবার এইচএসসি পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে। রাঙামাটিতে এ বছর পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২, যা গতবার ছিল ৭৫ দশমিক ৩৩। খাগড়াছড়িতে গতবার ছিল ৬৮.৭৮ শতাংশ যা এবার ৬২. ২৭ শতাংশ। বান্দরবানে পাসের হার ৬৬ দশমিক ৮১ যা গতবার ছিল ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ।
চট্টগ্রামের বোর্ডের শিক্ষা সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথ এ ব্যাপারে বলেন, পাহাড়ে ফলাফল খারাপের যথেষ্ট কারণ আছে। পাহাড় দুর্গম এলাকায় হওয়ায় কলেজ তেমন নেই। আবার কলেজে আসতে ছাত্রকে শহর বা উপজেলায় আসতে হয়। সেখানে যেমন শিক্ষক সংকট রয়েছে, একই সাথে আর্থিক অনটনের কারণে বিভিন্ন সুবিধা পায় না শিক্ষার্থীরা। তাই খারাপ হয় তাদের ফলাফল।

উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম, মাদ্রাসা ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ২৭ আগস্ট।
গতকাল দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ নগরীর মুরাদপুর বোর্ড কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ ফলাফল ঘোষণা করে। ফলাফলের তথ্য উপস্থাপন করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমান।
এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ, কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক জাহেদুল হক ও বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী।