চবি সংবাদদাতা »
‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কবে ডিজিটাল হবে’ প্রশ্নটি শিক্ষার্থীদের। অবশ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন প্রশ্ন তোলাটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি মফস্বল পর্যায়ের কলেজগুলোও যেখানে অফিসিয়াল কাজকর্ম এবং ফি লেনদেনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছে সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখনো রয়েছে সেই সনাতন পদ্ধতিতে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ এবং ফি প্রদান করতে হচ্ছে ব্যাংকের অভ্যন্তরে গাদাগাদি করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে। যেখানে নেই পর্যাপ্ত জায়গা ও আলো-বাতাসের ব্যবস্থা। যার ফলে চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি এবং চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অথচ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ফর্ম ফিলাপ ও ফি প্রদানের বিষয়টি ঠিকই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সম্পন্ন হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের সেশন ফি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিতে বাধা কোথায়? এ প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কিছু কিছু বিভাগে ইতোমধ্যে পরীক্ষা শুরু হলেও অধিকাংশ বিভাগে চলছে পরীক্ষা শুরুর আনুষ্ঠানিকতা। সেই সাথে বেড়েছে ফর্ম ফিলাপ ও ফি প্রদানের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে শিক্ষার্থীদের দৌড়ঝাঁপ।
সরেজমিনে দেখা যায়, অগ্রণী ব্যাংক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শিক্ষার্থীরা সেশন ফি ও পরীক্ষার ফি জমা দেয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে ছোট একটি কক্ষে দীর্ঘ লাইনে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় আবাসিক হলসমূহ খুলে দেয়া না হলেও ব্যাংকে ফি দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। এতে চরম ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন এবং ফি জমা দেয়া যদি অনলাইনের মাধ্যমে করা যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের সেশন ফি অনলাইনে নিতে সমস্যা কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিসিয়াল কার্যক্রম এবং ফি প্রদানের প্রক্রিয়াটির ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যাবহার করলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে এবং এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের তেমন আশঙ্কাও থাকবে না বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাসিম হাসান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘ডিজিটাল যুগে এসেও আমরা এখনো এনালগ সিস্টেমের প্রাচীরে আবদ্ধ হয়ে আছি। ফর্ম ফিলাপের টাকা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। এই প্যান্ডামিক সিচুয়েশনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আমাদের ফি জমা দিতে হচ্ছে। অথচ আমরা ভর্তি পরীক্ষার সময় ঠিকই অনলাইনে ফি জমা দিয়ে এসেছি। তাহলে এখন এসে সেশন ফি অনলাইনে নিতে সমস্যা কোথায়।”
এই সময়ে এসে এমন সনাতনী পদ্ধতিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতা ও বাংলাদেশ সরকারের নীতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন শিক্ষকরাও।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘একদিকে করোনা সংক্রমণের অজুহাত দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ খোলা হচ্ছে না অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইনে গাদাগাদি করে দাঁড় করিয়ে ফি জমা নেয়া হচ্ছে, যেখানে স্বাস্থ্যবিধির নামমাত্র নেই। বিষয়তো সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এটা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই ডিজিটালাইজেশন এর উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষিত হওয়ার এত বছর পরেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সেই সনাতনী পদ্ধতিতেই আটকে আছে। অথচ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি গ্রাম পর্যায়ের অনেক কলেজও ডিজিটালাইজেশন এর ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। এটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি চরম ব্যর্থতা।’
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক, ‘ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম সুপ্রভাতকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের ফি প্রদানের প্রক্রিয়াটা ডিজিটালাইজেশন এর আওতায় নিয়ে আসার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কিছু সময় লাগবে। আশা করি এই অর্থবছরের মধ্যেই আমরা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারব। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অর্থবছরের শুরুতেই এটি চালু হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এসএম মনিরুল হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কিছু সময় লাগবে। আশা করি শীঘ্রই শিক্ষার্থীরা ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে ডিজিটাল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।’