শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) একটি টার্মিনাল ড্রাইডকে পাঠানোতে কমেছে গ্যাস সরবরাহ। ট্রার্মিনালটি মেইনটেন্যাস করে আসতে সময় লাগবে আরও দেড় মাস। এর পরপরই বর্তমানে সরবরাহে থাকা টার্মিনালটি পাঠানো হবে ড্রাই ডকে। সেটি ফিরে আসতে সময় লাগবে আরও দুই মাস। কাজেই গ্যাস নিয়ে ভোগান্তি আরো বাড়বে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রাহকদের গ্যাস সংকট মেনে নিতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২ নভেম্বরে সিঙ্গাপুরের ড্রাই ডকে মেইনটেন্যাসের জন্য পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইইবিএল) এলএনজি টার্মিনালটি। ২০১৭ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এ টার্মিনালটি স্থাপন করা হয় ২০১৭ সালে। ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতার এ টার্মিনালটি স্থাপনের জন্য পাঁচ বছর পরপর মেইনটেন্যাসের জন্য ড্রাইডকে পাঠানোর শর্ত দেওয়া হয়। শর্ত মেনে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে শুরু হয় এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়। একই শর্তে দেশীয় সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি লিমিটেড (এসএলএনজি) আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল বসায়, যা ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে সরবরাহ শুরু করে। এলএনজি টার্মিনালগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য দেওয়া হয় রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডকে (আরপিজিসিএল)।
আরপিজিসিএলের এলএনজি ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়মে পাঁচ বছর পর পর ড্রাইডকে পাঠাতে হয়। আমরা ইইবিএলের এলএনজি টার্মিনাল অনেকটা দেরিতে পাঠিয়েছি। এজন্য আমরা অবশ্য পূর্ব অনুমতিও নিয়েছিলাম। যদি এর বেশি সময় আমরা নিই, তাহলে আমাদের টার্মিনালে আর কোনো জাহাজও ভিড়বে না। তাই নিয়ম মেনে ২ নভেম্বরে ড্রাইডকে পাঠানো হয়েছে। টার্মিনালটি ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফিরে আসবে বলে আশা করছি।’
অন্য টার্মিনালটি ড্রাইডকে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম তো একই রকম। শীতকালে গ্যাসের চাহিদা অনেকটা কম থাকে। তাই এই মৌসুমটা টার্গেট করা হয়েছে। ইইবিএলের এলএনজি টার্মিনালটি ফিরে আসার পরের মাসে, মানে জানুয়ারিতে সামিটের (এসএলএনজি) টার্মিনালটি পাঠানো হবে। ওটা ফিরে আসতেও দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে। বলা যায়, ফেব্রয়ারির পর থেকে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’
জানা যায়, গ্যাস রূপান্তরিতকরণে আরপিজিসিএল কাজ করলেও সরবরাহের কাজ করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। জিটিসিএল চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্ণফুলী গ্যাস ডিসস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডসহ (কেজিডিসিএল) মোট ছয়টি বিতরণ সংস্থাকে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে।
বর্তমান গ্যাস বিতরণের অবস্থা জানতে চাইলে জিটিসিএলের অপারেশন ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি টার্মিনাল না থাকায় সরবরাহ স্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। আমরা নিয়মিত ৮০০ থেকে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেতাম। সেটা পেট্রোবাংলার ডিস্ট্রিবিউশন অর্ডার অনুযায়ী সরবরাহ করতাম। আর এখন গড়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছি। তাই ডিস্ট্রিবিউশনও কিছুটা কমিয়ে আনতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেজিডিসিএলকে যতটুকু দেওয়া হয়েছে, আগামীতে তার পরিমাণ আরও কমতে পারে। পেট্রোবাংলার অর্ডার অনুযায়ী আমরা এ ব্যবস্থা নিবো। অর্ডরটি কেমন হবে তা পেট্রোবাংলাই বলতে পারবে।
বিষয়টি জানতে কথা হয় পেট্রোবাংলার অপারেশন অ্যান্ড মাইনস বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সামনে বোরো মৌসুম। সেদিক বিবেচনা করে এখন কেজিডিসিএলে সরবরাহ অনেকটা ঠিক রাখা হয়েছে। ওখানে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সার কারখানাগুলোতে। এখন দুইটি কারখানাই চালু রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম। তাই ওখানে সরবরাহ কমানো হয়েছে। সামনে (আগামীতে) চাহিদার পরিবর্তন হবে। সেটা বিবেচনা করেই নেক্সট শিডিউলে পরিবর্তন আসতে পারে।’
সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় কেজিডিসিএল বর্তমান কিভাবে গ্যাস বিতরণ করছে তা জানতে চাওয়া হয় সংস্থাটির অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্যাস বিতরণে তিনটি লাইনের মধ্যে বিদ্যুৎ ও সারের লাইন আলাদা। তবে আবাসিক ও শিল্প-কারখানায় একটাই লাইন আছে। তাই শিল্প-কারখানা ও আবাসিকে আপাতত একই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হলেও তা আবাসিকে সকাল বেলা, বিশেষ করে ১০ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চাপ কম থাকছে। তবে সন্ধ্যা ছয়টা পর সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ায় ওই সময় পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। আমরা (কেজিডিসিএল) আপস্ট্রিমে থাকায় আমরা গ্যাস সরবরাহ চাহিদার তুলনায় সামন্য কিছু কম পাচ্ছি। তবে পরবর্তীতে কি নির্দেশনা আসবে তা জানি না।’
প্রসঙ্গত, একসময় কুমিল্লার বাখরাবাদ, ফেনী বা সিলেট অঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রিড হয়ে কেজিডিসিএলে গ্যাস সরবরাহ করা হতো। দেশের জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে ২০১০ সালে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে কেজিডিসিএলকে পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর করা হয়েছে। শেষ তথ্যে, ইইবিএল ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৯৪ এমএমএসসিএফ এবং এসএলএনজি ৪ লাখ ৭০ হাজার ১৮৮ দশমিক ৯১ এমএমএসসিএফ গ্যাস সরবরাহ করে।