ডেস্ক রিপোর্ট »
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে গ্যাসবিচ্ছিন্ন চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে যে গ্যাস সরবরাহ করা হয় সেটা আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি। আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে কক্সবাজারের মহেশখালীতে সাগরের তলদেশের সঞ্চালন পাইপলাইনের (কনভার্টারের) মাধ্যমে এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়।
ভাসমান টার্মিনালের দুটি কনভার্টারের মধ্যে একটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির এবং আরেকটি সামিট এলএনজি টার্মিনাল। মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি গত ১ নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। এটি গতকাল বৃহস্পতিবার চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চালু করা যায়নি। একটি পাইপলাইন দিয়েই এতদিন সরবরাহ চলছিল।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রক্ষণাবেক্ষণ হওয়া কনভার্টারটি কমিশনিং করা হয়েছে। পাশাপাশি অপর কনভার্টারটি রি-কমিশনিং করা হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। কিন্তু মধ্যরাত থেকে নতুন কমিশনিং হওয়া কনভার্টারের জেনারেটর বিকল হয়ে গেছে। এজন্য পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশান কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম গ্যাসবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সার কারখানা কাফকো ও সিইউএফএল, শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গ্যাসনির্ভর সব শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস নেই ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনেও। এছাড়া চট্টগ্রামে ইস্পাত, সিমেন্ট, শিপ ব্রেকিং, ঢেউটিন, গার্মেন্টসের মতো শিল্প খাতে কয়েক হাজার বাণিজ্যিক এবং ৬ লাখেরও বেশি আবাসিক গ্রাহকের সংযোগ গ্যাসবিচ্ছিন্ন। কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রচার না করায় এ নিয়ে গ্রাহকদের কোনো রকম প্রস্তুতিও ছিল না।
চট্টগ্রামে আগে গ্যাস সংকট হলে সিলেট এবং কুমিল্লা অঞ্চলের গ্যাস আনা হতো আশুগঞ্জ বাখরাবাদ পাইপলাইন দিয়ে। কিন্তু এলএনজি আমদানি শুরু করার পর আশুগঞ্জ বাখরাবাদ পাইপ লাইনকে বাল্ব লাগিয়ে ওয়ান-ওয়ে করে ফেলা হয়। ফলে চট্টগ্রাম থেকে গ্যাস শুধু নেওয়া যায়, আনা যায় না।
দুটি পাইপলাইনের মধ্যে একটি দিয়ে সরবরাহ করায় গত নভেম্বর থেকে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিল চট্টগ্রামে। এছাড়া শিল্পকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলসহ বিকল্প জ্বালানি দিয়ে কারখানার মালিকেরা উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ।
মার্কিন টার্মিনালটি চালু হলেও সংকট যাবে না। কারণ, সামিটের টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণে যাবে। দুটি সমানতালে চালু থাকলেই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ আছে।
গ্যাস সংকট থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ছুটির দিনে কর্মজীবী মানুষেরা বাসায় থাকেন। ফলে রান্না বন্ধ থাকায় খাবার সংকটে পড়েতে হয়েছে তাদের। সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবার সংগ্রহ করতে দেখা গেছে তাদেরকে। সড়কের টং দোকানগুলোতেও ছিল ভিড়। ছুটির দিনে অনেক বেকারি বন্ধ থাকায় পাউরুটি পাওয়া যাচ্ছিল না দোকানগুলোতে। এছাড়া বাড়তি দামে খাবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। দোকানিরা, সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে রান্না করার অজুহাতে খাবারের বেশি দাম আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেন অনেকে।