সুপ্রভাত ডেস্ক »
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ভারতকে প্রথমবার হারানোর উচ্ছ্বাসে ভাসল গোলাম রব্বানী ছোটনের দল।ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই দুর্দান্ত এক দল হয়ে উঠল বাংলাদেশ। মাঝমাঠের সুর বেঁধে দিলেন মারিয়া-মনিকা। গোল করার আনন্দে ভাসলেন স্বপ্না-কৃষ্ণা। আঁখি-মাসুরা রক্ষণ সামলালেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো। পাহাড়সমান দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত পোস্ট আগলে রাখলেন রুপনা চাকমা। নজরকাড়া ফুটবলের পসরা মেলে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসল বাংলাদেশ।
মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ‘এ’ গ্রুপের সেরা হওয়ার লড়াইয়ে ভারতকে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। জোড়া গোলের সৌরভ ছড়ান সিরাত জাহান স্বপ্না, একটি কৃষ্ণা রানী সরকারের।
টানা দুই জয়ে আগেই সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল দুই দল। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় এ ম্যাচ ড্র করলে গ্রুপ সেরা হত ভারত। সেরা চারে স্বাগতিক নেপালকে এড়াতে খুব করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। টানা তিন জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে চাওয়া পূরণ করল গোলাম রব্বানী ছোটনের দল।
মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সাফের ষষ্ঠ আসরে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ৬-০ ব্যবধানে।
দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে ভারতের অপরাজেয় যাত্রার রাশ টেনে ধরল বাংলাদেশ। আগের পাঁচ আসরে শিরোপা জয়ের পথে ভারত ২২ ম্যাচ খেলে জিতেছিল ২১টিতে, ড্র একটিতে। ওই একমাত্র ড্র ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে; ২০১৬ সালে শিলিগুঁড়ির আসরে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলা আগের ১০ ম্যাচে বাংলাদেশের হার ছিল ৯টি, ড্র ওই একটি। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙার ইঙ্গিত মেয়েরা দিতে থাকে শুরু থেকে। আত্মবিশ্বাসী এক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে তাদের খেলায়।
মারিয়া মান্দা-মনিকা চাকমা-সানজিদা খাতুন মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মসৃণ করে দেন আক্রমণের পথ। খবর বিডিনিউজ।
সপ্তম মিনিটে আঁখির পাস ধরে সানজিদা খাতুন আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান গোলমুখে। স্বপ্না ও কৃষ্ণা ছুটে যান হেডের জন্য; ভারতের গোলরক্ষক অদিতি চৌহান বল ধরতে যাওয়ার সময় কৃষ্ণার সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে যান। স্বপ্না টোকায় বল জালে জড়ালেও রেফারি বাজান ফাউলের বাঁশি।
দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাসে মাতে বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে এগিয়ে আক্রমণের সুর বেঁধে দেন অধিনায়ক সাবিনা, তার বাড়ানো পাস ধরে কৃষ্ণা দেন বক্সের দিকে ছোটা স্বপ্নাকে। বাঁ পায়ের নিখুঁত প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
২০১৬ সালে শিলিগুঁড়ির আসরে ভারতের কাছে ৩-১ ব্যবধানে হেরে যাওয়া ফাইনালে দলের একমাত্র গোলটি করেছিলেন স্বপ্না। দলটির বিপক্ষে এবার তিনি পেলেন দ্বিতীয় গোলের দেখা।
একটু পর ব্যবধান দ্বিগুণের সুযোগ নষ্ট করেন স্বপ্না। মাঝমাঠ থেকে মনিকা চাকমার লং পাস গতিতে ভারতের ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে নাগাল পেলেও ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি স্বপ্না। তার দুর্বল শট পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা অদিতির পায়ে লেগে প্রতিহত হয়।
প্রথমার্ধে অধিকাংশ সময়ই খেলা হয় ভারতের অর্ধে। গোল শোধে মরিয়া চেষ্টা করলেও সান্ধিয়া রাঙ্গানাথন, অঞ্জু তামাংদের প্রচেষ্টা কখনও জমে যায় আত্মবিশ্বাসী রুপনা চাকমার গ্লাভসে, কখনও যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে।
২২তম মিনিটে কৃষ্ণার দারুণ গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। শামসুন্নাহারের থ্রো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আলতো টোকায় স্বপ্নাকে বল বাড়িয়ে কৃষ্ণা বক্সে সুবিধাজনক জায়গা খুঁজে নেন। স্বপ্নার কাছ থেকে ফিরতি পাস পেয়ে মুগ্ধতা ছড়ানো নিখুঁত শটে কাছের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন কৃষ্ণা।
২০২০ সালে অলিম্পিক বাছাইয়ের পর আবারও ভারতের জালে গোল পেলেন ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। চলতি সাফেও খুললেন গোলের খাতা।
দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচের চিত্রনাট্যে পরিবর্তন নেই। আধিপত্য করে বাংলাদেশের, কোণঠাসা হয়ে থাকে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। ৫৩তম মিনিটের গোলে আরও ব্যাকফুটে চলে যায় সুরেন ছেত্রির দল। এবারও আক্রমণের শুরু সাবিনার জাদুকরি পায়ে। অধিনায়কের থ্রু পাস পেয়ে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে প্রতিরোধের সুযোগ না দিয়ে নিচু কোনাকুনি শটে বাংলাদেশকে জয়ের পথে আরও এগিয়ে দেন স্বপ্না।
৬৪তম মিনিটে স্বপ্নাকে তুলে ঋতুপর্ণা চাকমাকে নামান কোচ। ব্যবধান কমাতে চাপ বাড়াতে থাকে ভারত। রক্ষণ আগলে রেখে মাঝেমধ্যে পাল্টা আক্রমণে উঠতে থাকে বাংলাদেশও। তাতে শুধু প্রথমার্ধের একপেশে ভাবটা কমে, কিন্তু ম্যাচের লাগাম থাকে বাংলাদেশের মুঠোতেই।
নির্ধারিত সময়ের সাত মিনিট বাকি থাকতে ফরোয়ার্ড কৃষ্ণাকে তুলে মিডফিল্ডার শামসুন্নাহারকে (জুনিয়র) নামান ছোটন। বাকিটা সময়ে দিশেহারা ভারত পায়নি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ। রেফারির শেষের বাঁশি বাজতেই জয়োৎসবে মাতে বাংলাদেশ।
আগামী শুক্রবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ ভুটানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।