প্রধানমন্ত্রীর গৃহায়ন কর্মসূচি
মুজিববর্ষে গৃহহীন মানুষকে নতুন ঘর দেবার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৫শ পরিবারকে নবনির্মিত ঘর প্রদান করা হয়েছে গত রোববার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে ২ শতাংশ জমিসহ সেমিপাকা এসব ঘর অসহায় পরিবারদের হাতে দলিলসহ তুলে দেন প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গৃহহীনে ঘর দেবার কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমিহীনদের খাস জমি দেওয়া এবং তাদের জন্য গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের একটা ঘর পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ, তার মুখে যে হাসি, তার চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না। উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর প্রদান করা হয়। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরও ১ লাখ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বিনামূল্যে ঘর প্রদান করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস জানান।
সেমিপাকা ঘরে রয়েছে ২টি রুম, একটি বড় বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট। আছে সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। দলিলে জমির মালিকানা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় বিদ্যালয়, খেলার মাঠ ও ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘গৃহহীনে গৃহদান’ কর্মসূচি মানবিক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় দৃষ্টান্ত। আমাদের সংবিধানে প্রতিটি মানুষের জন্য অন্ন বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান প্রদানে রাষ্ট্রের যে অঙ্গীকার রয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারলে সমাজে বৈষম্য হ্রাস ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন সহায়ক হবে। তাছাড়া এসব মৌলিক অধিকার প্রাপ্তি মানুষের মর্যাদা, তার সামাজিক ও অথনৈতিক নিরাপত্তা সুদৃঢ় করবে। বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্র্য কমে এলেও বর্তমান করোনাকালে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়িয়েছে, করোনাকালে গ্রাম-শহরের দরিদ্র মানুষের জন্যে সহায়তা কর্মসূচি রয়েছে। তবে তাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সে সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি যদি রোধ করা না যায় তবে দরিদ্র ও নি¤œবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। যারা ঘর পেয়েছেন কিংবা ভবিষ্যতে পাবেন, তাদের জীবন-জীবিকার স্বার্থে কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে এটাও জরুরি যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা মানুষকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে, সে সবের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে উপকূলীয় চরাঞ্চল ও দ্বীপাঞ্চল, নদীভাঙন এলাকার মানুষদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি। নগরের দরিদ্র ও বস্তিবাসীদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বাস করার ব্যবস্থা করার দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। মানুষের জীবন জীবিকার জন্য পরিবেশসম্মত বাসস্থান অপরিহার্য। এর সঙ্গে তার শারীরিক ও মানসিক সম্পর্ক যেমন রয়েছে তেমনি তার কর্মক্ষমতার বিষয়টিও এর সাথে জড়িত। নগরের শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সুলভে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন যাতে উৎপাদন ও সেবা কর্মকা-ে তারা অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারেন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসতে পারে।