নিজস্ব প্রতিনিধি, মানিকছড়ি
খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার অনগ্রসর একটি জনপদ আগা ওয়াকছড়ি। হাফছড়ি ইউপির দুই নম্বর ওয়ার্ডের এই গ্রামটিতে অর্ধশত মারমা পরিবারের দুর্বিষহ জীবন-যাপন!
৫/৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসবাসরতরা একমাত্র ঝিরির ময়লা পানিতে খাওয়া, গোসল, রান্নাবান্না সাড়ে। আর ৮০% মানুষ ছন ও বেড়ার ছাপরা নিচে দুঃসহ জীবন-যাপন।
গত ১০ এপ্রিল বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর মারমা যুব সংঘের মানিকছড়ি উপজেলা শাখা কর্তৃক ওই দুর্গম জনপদে একটি ক্ষুধার্ত পরিবারে খাদ্য সহায়তা বিতরণে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।
মানিকছড়ি উপজেলার জামতলা থেকে পূর্বদিকে ৮/৯ কিলোমিটার দুর্গম রাস্তা পেরিয়ে আগা ওয়াকছড়ি। সেখানে এক-একটি টিলায় একটি মারমা পরিবারের ছোট ছোট, ছনের ঘরে বসবাস। কোন কোন ঘরের চারপাশ খোলা। এই এিলাকায় অর্ধশত পরিবার বসবাস করলে কোথাও টিউবওয়েল বা কুয়া বা ছড়া নেই। একটি মাত্র ঝিরি থেকে মগ, থালা দিয়ে পানি তুলে কলসি বা পাতিলে ভরতে হয়। এক কলস পানিতে ভরতে ৫/৭ মিনিট সময় লাগে। এই একটা পানির উৎসে পর্যাপ্ত পানিও নেই। এভাবে সকাল-সন্ধ্যা এমনকি রাত ১০টায়ও পানি সংগ্রহে থাকতে হয়। এমন দুর্বিষহ পরিবেশে মানবেতর জীবনযাপন করা এসব মারমা পরিবারগুলোর যেন আদিযুগে বসবাস!
রাপ্রু মারমা ও তার স্ত্রী পাইম্রাউ মারমা ২ কন্যাসন্তান নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করেন। কথা হয় পাইম্রাউ মারমার সাথে। তিনি বাংলায় তেমন কথা বলতে না পারলেও খাদ্য, বস্ত্র, পানি ও খোলা ঘরে রাত্রি যাপনসহ নানা কষ্টের কথা সহজেই বুঝে নেওয়া যায়। তিনি বলেন, এই এলাকায় কাজ-কর্ম নেই, স্বামীর একটি চোখ অন্ধ! বাচ্চাদের মুখে ঠিকমত ভাত দিতে পারি না। আর ভাত দিলেও পানি দেয়া যায় না। কারণ পানির একমাত্র উৎস ওই দূরের ঝিরি! জঙ্গলে ঢাকা ঢালুতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পানি তোলা খুব কষ্টদায়ক!
গ্রামের উদীয়মান যুবক অংহ্লাপ্রু মারমা জানালেন, বাড়িতে মেহমান আসলে ভাত, তরকারি কম-বেশি খাওয়াতে পারি। কিন্তু পানি দিতে পারি না। নির্বাচন এলে মেম্বার, চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আসে। ভোট শেষে, সব শেষ। আর কেউ আসে না। জনপদ অনগ্রসর ও পিছিয়ে থাকা মারমা জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি সদস্য উগ্য মারমা বলেন, এই দুর্গম এলাকায় বরাদ্দ আনার চেষ্টা করছি।