গাজায় গণহত্যা বন্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ দরকার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর হাতে ইহুদি গণহত্যার পর ১৯৪৮ সালে জেনোসাইড কনভেনশন কার্যকর করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যে কোনো ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা জাতীয়তার কোনো জনগোষ্ঠীকে আংশিক বা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা জেনোসাইড বা গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস যাদের জন্য এই ঐতিহাসিক কনভেনশন করা হয়েছিল ৭৫ বছর পর সে কনভেনশন ভঙ্গ করে তারাই গণহত্যা চালাচ্ছে একটি দেশে যেখানে তাদের বসতি গড়তে দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাস আরও সাক্ষী দেয় যে, সে সময় ফিলিস্তিনের জনগণকে বিতাড়িত করেই তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল এবং ইসরায়েল নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া হয়েছিল। এত বছর পর সে আদালত ওই দেশকেই গণহত্যা ঠেকাতে নির্দেশ দিয়েছেন। শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আইসিজের এই আদেশে গণহত্যা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়া হলেও গাজায় অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আদালতের আদেশের পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, তা এক মাসের মধ্যে আইসিজেতে জানাতে ইসরায়েলের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইসিজের আদেশে বলা হয়, গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে ইসরায়েলকে তার ক্ষমতার আওতার মধ্যে থাকা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইসরায়েলের সেনারা যাতে গাজায় গণহত্যার মতো কোনো কিছু না করে, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে ইসরায়েলকে। আদালত গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা ঘটিয়েছে কি না-এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দিলেও বলেছেন, গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা সনদের আওতায় গণহত্যা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এই হামলায় গাজা উপত্যকায় ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
এ মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে আইসিজেতে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। জরুরি ভিত্তিতে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের আদেশ চাওয়া হয় সেখানে, যে অভিযানে ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। আইসিজের যে ১৭ জন বিচারকের প্যানেল শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন স্থায়ী বিচারক। এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েলের একজন করে বিচারক রয়েছেন। আদালত যে আদেশ দিয়েছে, তা অনুমোদন পেয়েছে ১৬-১ ভোটে। আইসিজে যে সিদ্ধান্ত দেয়, তা চূড়ান্ত; এর বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রকে রায় মানতে বাধ্য করার কোনো সুযোগও এ আদালতের নেই। তারপরও আইসিজের রায় রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে এবং শুক্রবারের আদেশ ইসরায়েল এবং তাদের পশ্চিমা মিত্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘বিব্রতকর’।
হাজার হাজার নিরপরাধ নারী-শিশু হত্যা করেও যাদের বিবেক সামান্য জাগ্রত হয় না তারা ‘বিব্রত’ হলেই বা কী, না হলেই বা কী? এখন তো দরকার এই গণহত্যা অচিরেই বন্ধ করার লক্ষ্যে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া। কারণ এরপরেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, চূড়ান্ত বিষয় না পাওয়া পর্যন্ত তারা গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।