একদিকে তীব্র তাপদহন অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং, এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবন এখন ওষ্ঠাগত। গ্রামে-শহরে একই অবস্থা বিরাজ করলেও দুর্গতি লাঘবের আশাপ্রদ কোনো সংবাদ নেই বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিদিন ১৩০০ থেকে সাড়ে ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে মিলছে ৯০০ থেকে ১১শ’ মেগাওয়াট। এতে দৈনিক দুই থেকে আড়াইশো মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। এছাড়া জ্বালানি সংকটের কারণে চট্টগ্রামের নয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। আবার কিছু উৎপাদন কেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
বুধবার পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন পত্রিকা। বিপিডিবি সূত্র জানিয়েছে, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ দিনের বেলায় ১০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট। রাতের বেলায় ২০০ থেকে আড়াইশো মেগাওয়াট পর্যন্ত হয়। কখনও কখনও আবার সেটা ৪০০ মেগাওয়াটও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা বলছেন, গ্যাস ও জ্বালানি সংকটের কারণেই এমনটা হচ্ছে।
বিপিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘জাতীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। চাহিদামত উৎপাদন হলে লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে যা পাচ্ছি, তা সুষম বণ্টন করে সমতা বজায় রাখছি।’
পিজিসিবি’র সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডাটা অ্যাকুইজিশনের (স্ক্যাডা) মতে, জ্বালানি সংকটের কারণে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। গ্যাসের প্রেসার কম ও জ্বালানি তেলের সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের পরিমাণ অনেক সময় পরিবর্তন হচ্ছে। আসলে বিদ্যুতের উৎপাদন, সরবরাহের ওপরই নির্ভর করে লোডশেডিংয়ের নির্ধারিত মাত্রা। জ্বালানি সংকটের কারণে রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৮০ মেগাওয়াট, টেকনাফে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট মেনটেনেন্সের কারণে ১৫০ মেগাওয়াট, জ্বালানি সংকটের কারণে জুলধা ইউনিট ২ এবং ইউনিট ৩ এর ১০০ মেগাওয়াট, সোলার প্যানেলে সমস্যা হওয়ায় কাপ্তাই সাত মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট, জ্বালানি সংকটের কারণে জুডিয়াক পাওয়ার প্ল্যান্টে ৫৪ মেগাওয়াট, পরীক্ষামূলক থাকায় মিরসরাই গ্যাস চালিত ১৫ মেগাওয়াট এবং সোলার প্যানেলে সমস্যা থাকায় সোনাগাজীর ৭৫ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে চালু আছে এমন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জ্বালানির অভাবে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যেতে পারছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ না বাড়ালে উৎপাদনও বাড়বে না। এখন প্রশ্ন হলো কবে সরবরাহ বাড়বে, কবে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণার অবসান হবে। এই গরমে বিদ্যুৎ না থাকা অনেকটা ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’- এর মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ মুহূর্তের সংবাদ