নিজস্ব প্রতিবেদক »
শীত এখনো জেঁকে বসেনি। কিন্তু শীত আসার আগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রামের ‘গাইড’ ব্যবসায়ীরা। গুদামে নানা শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসে আছে খাতুনগঞ্জের ‘গাইড’ মার্কেটের বিক্রেতারা। বাড়ছে তাদের ব্যস্ততাও।
অন্যদিকে নগরীর জলসা মার্কেট ও হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও দোকানে সাজিয়ে রাখছেন শীতের পোশাক। চট্টগ্রামের স্থানীয়রা এই দুটি মার্কেটকে খুচরা কাপড় বিক্রির পুরাতন ‘গাইড’ মার্কেট হিসেবেই চিনেন। নগরীর নিউমার্কেট ও আদালত ভবনের পাশে মার্কেট দুটির অবস্থান।
সাধারণত এইসব কাপড় জাপান, কোরিয়া এবং তাইওয়ান থেকে খাতুনগঞ্জের পুরাতন ‘গাইড’ ব্যবসায়ীরা আমদানি করেন। কিন্তু এইসব কাপড়গুলো হচ্ছে পুরনো। বিদেশিরা একবার পরেই অনেক কাপড় ফেলে দেন বা কোন দাতব্য সেন্টারে দিয়ে দেন। আর সেগুলোই আমাদের দেশে আমদানি করা হয়। তবে কাপড়গুলো দেখতে ফ্রেশ এবং ভালো দেখা যায়। সে হিসেবে কাপড়গুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম। শীতের কাপড়গুলোকে বাক্স আকারের প্যাকে ভর্তি করা হয়। যাকে বলা হয় ‘বেল’। আর এই ‘বেলই’ স্থানীয়দের কাছে ‘গাইড’ নামে পরিচিত। এই ‘গাইড’গুলোই আমদানি করে আনেন বন্দর ও খাতুনগঞ্জের বড় ব্যবসায়ীরা। তারপর সেখান থেকে দেশের পুরাতন কাপড়ের আড়তদারদের কাছে পৌঁছে। তাদের কাছ কাছ থেকে ‘গাইড’ কিনে এনে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে থাকেন।
খাতুনগঞ্জের ‘গাইডে’র আড়তে ঘুরে দেখা যায়, একেক ‘গাইডে’ একেক ধরনের শীতের কাপড় থাকে। গাইডগুলো পরিচিত করা হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রতীক দিয়ে। যেমন, কোনোটা দোয়েল কিংবা কোনটা ঘোড়া।
বাংলাদেশ পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘এই ব্যবসায় অনেক সমস্যা যাচ্ছে। এই বছরের পণ্য এখনো আসেনি। সরকার লাইসেন্স দিয়েছে, এলসি হয়েছে, ১০-১৫ দিনের মধ্যে পণ্য আসবে। গত জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত একটানা পণ্য এসেছে। তবে আমাদের এখনো প্রচুর ‘গাইড’ রয়েছে। আগে পণ্যের দামের সাথে শিপিং খরচ সংযুক্ত থাকতো, এখন এক্সট্রা শিপিং ফ্রেইড দিতে হয়। এক কন্টেইনারে ১ থেকে ৪ হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়তি দিতে হয়। শিপাররা কখনো বলে ৮ হাজার ডলার হয়েছে, কখনো বলে ৯ হাজার ডলার হয়েছে। যখন যেটি বলে আমরা তত দামে নিচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন ডলারের দাম বাড়ছে, শিপিং ফ্রেইড বাড়ছে, সব কস্টিং বাড়ছে। সুতরাং সব খরচের সমন্বয়ে এবারের ‘গাইডে’র দামও বাড়তে পারে।’
পুরাতন কাপড় নিয়ে ক্রেতার চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাধারণত এটি ঠা-ার উপর নির্ভর করছে। ঠা-া বাড়লে ক্রেতার চাহিদা বাড়বে। তবে শীতকালীন পুরাতন গরম পোষাকের উপর ক্রেতাদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আমরা এ বছর আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি ১০-১৫ দিনের মধ্যে চট্টগ্রামের বাজারে শীতের ‘গাইডে’র ব্যবসা জমে উঠবে। তবে এখন শীতের পোষাকের চাহিদা আছে।’
খাতুনগঞ্জের পুরাতন পোষাকের আড়তদার মেসার্স হাসেম অ্যান্ড ব্রাদাসের্র নূরদ্দীন বলেন, ‘আমরা কুরিয়ারের মাধ্যমে সারাদেশে বিক্রি করি। সারাদেশের খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। এখানে ‘বেল’ প্রতি ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা দামের মধ্যে ‘গাইড’ পাওয়া যায়। আমরা জ্যাকেট, স্যুয়েটার, গেঞ্জি, টি-শার্ট, জিন্সসহ সব ধরনের শীতের পোশাক রেখেছি। আমরা দ্বিতীয় পার্টি। প্রথম পার্টি থেকে প্রতি ‘বেলে’ ২ থেকে ৩শ টাকা লাভে বিক্রি করি।’
এবারের শীতের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন সবকিছুর দাম বাড়তি। কুরিয়ায় আগে প্রতি ‘বেল গাইড’ খরচ নিত ৪শ টাকা। যা এখন নিচ্ছে ৫শ টাকা। জ্বালানি খরচ, শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি, এলসি খরচ বৃদ্ধি দেখিয়ে ১ম ব্যবসায়ী পক্ষ ‘গাইডে’র দাম সমন্বয় করে বাড়িয়েছে। তবে আমরা আমরা তা সমন্বয় করে বিক্রি করবো। এখনো গত বছরের কাপড় স্টক আছে। দশ পনেরো দিন পর নতুন কাপড় আসলে আবারো স্টক করবো। তবে যেভাবে স্টক করছি সেভাবে ক্রেতা আসছে না। আগে দিনে ৫০টি ‘গাইড; বিক্রি করতাম এখন বিক্রি করছি দিনে ৫ থেকে ১০টি। আমাদের বিক্রি কমে গেছে।
জলসা মার্কেটের পুরাতন কাপড় বিক্রেতা মো. জসিম (৩২) বলেন, ‘আমি এই মাকের্টের বিক্রেতা। নগরীর খাতুনগঞ্জ থেকে একসাথে ১০ ‘বেল গাইড’ কিনে আনি। এখানে জ্যাকেট, জিন্স, ট্রাউজার আনি। সাথে বাচ্চাদের কিছু কাপড় আনি। এখনো নতুন ‘গাইড’ আসেনি। এখনো তেমন শীত পড়ছে না। তাই বেচাকেনা তেমন শুরু হয়নি। তবে শীত পড়লে বেচাকেনা বাড়বে।’
নগরীর জলসা ও জহুর মার্কেটে প্রায় দেড়শ থেকে দুইশটি দোকান। এসব দোকানির একটা বড় অংশই হচ্ছে মৌসুমী শীতের কাপড় ব্যবসায়ী। শীত মৌসুমের দুই তিন মাস তারা এই ব্যবসা করেন। শীত মৌসুম চলে গেলে তারা অন্য ব্যবসা করে জীবিকা অর্জন করেন। গ্রাম থেকে আসা অনেক মানুষের কাছেই এই দুটি মার্কেট বেশ জনপ্রিয়। শহরের তুলনায় গ্রামে আগেভাগে শীত পড়ার কারণে অনেকে এখান থেকে আগেই শীতের পোশাক নিয়ে যান।’