নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর দাম বাড়ার আশঙ্কায় অতি মুনাফার লোভে পেঁয়াজ মজুদ করেছিলেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু অন্যদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে খাতুনগঞ্জের আড়তে এখন বিক্রি কমে গেছে। পেঁয়াজের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল খাতুনগঞ্জের আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল কেজি প্রতি ৫২-৫৫ টাকা দরে। গত তিনদিন ধরে পেঁয়াজের এ মূল্য স্থির রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানিয়েছেন, গত তিনদিন ধরে পেঁয়াজ বিক্রি একেবারে কমে গেছে। আড়তগুলোতে আগে গড়ে ১০০ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি হলেও এখন ২০-২৫ বস্তার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে না। বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সোমবার ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পরদিন আড়তগুলোতে শত শত বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। যার বেশির ভাগ ক্রেতাই ছিলেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। যারা কখনো পেঁয়াজের ব্যবসা করেননি। গত বছরের মতো পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যেতে পারে, এমন আশায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এবার পেঁয়াজ ক্রয় করেছিলেন।
খাতুনগঞ্জের মোহাম্মদীয়া বাণিজ্যালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী মিন্টু সওদাগর বলেন, যারা কোনোদিন পেঁয়াজের ব্যবসা করেননি, তারা বস্তা বস্তা পেঁয়াজ কিনে নিয়ে গেছে। তারা হয়তো ভেবেছিলেন, গত বছরের মতো এবারও পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা কেজি ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু মিয়ানমার, চীন, তুরস্ক, মিশর প্রভৃতি দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির খবরে পণ্যটির দাম এখন স্থিতিশীল হয়ে গেছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে রাখায় এখন বেচাকেনা একেবারে কমে গেছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের আড়তদার শামসুর রহমান বলেন, তিনদিন আগেও দৈনিক ১০০ বস্তার ওপরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। এখন ২০-২৫ বস্তার ওপরে বিক্রি হচ্ছে না।
রিয়াজ উদ্দিন বাজারের তরকরি বিক্রেতা আবদুর রহিম গত মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জ থেকে ৫ বস্তা পেঁয়াজ কিনেছিলেন। এখন পর্যন্ত তিনি দুই বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। রহিম বলেন, কিছু লাভের আশায় পেঁয়াজ এনে রেখেছিলাম। দাম বাড়লে হয়তো বেশি লাভ হতো। কিন্তু দাম না বাড়াতে অল্পলাভে বিক্রি করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, গত শনিবার খাতুনগঞ্জে সাগরপথে অবৈধভাবে আসা মিয়ানমারের আনুমানিক ১০০ টন পেঁয়াজ ঢুকেছে। ২৫-২৮ টাকায় কেনা এসব পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকায়। এদিকে ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর পথিমধ্যে থাকা আমদানিকৃত ৩০০ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসতে আসতে পচে গেছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা। যে কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের চালান আর ঢুকেনি খাতুনগঞ্জে।
খাতুনগঞ্জের আড়তে পেঁয়াজ ৫২-৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও নগরীর খুচরা বাজারে এখনও ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দক্ষিণ ভারতে বন্যায় পেঁয়াজের খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সপ্তাহখানেক আগে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে একলাফে ৫০ টাকা বেড়ে যায়। ওই সংকটের কারণে ভারত গত সোমবার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। পরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকে পাইকারি বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। দাম চড়ে যায় ৭০ টাকায়। কোথাও কোথাও খুচরা বাজারে ৮০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।