সুপ্রভাত ডেস্ক
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে ধীরে ধীরে সংক্রমণ সারাদেশে ছড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হটস্পট’ চিহ্নিত জেলাগুলোতে কঠোরভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে; এবার সারাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
তারা বলছেন, মহামারির প্রথম ঢেউ চলাকালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম যেমন হটস্পট হয়ে উঠেছিল, এবার তার বিপরীত দশা জেলা পর্যায়ে দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকায়; দুর্বল সক্ষমতার জেলা হাসপাতালগুলো রোগীর চাপে পর্যদুস্ত হবে। তখন মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হবে।
জেলা পর্যায়ে প্রস্তুতির পাশাপাশি দেশের উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এমন সময়ে এমন সতর্ক বাণী দিচ্ছেন, যখন আজ মঙ্গলবার (৮ জুন) সকাল নাগাদ গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ২,৩২২ জনে উন্নীত হওয়ার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ৪১ দিন পর আবারও করোনাভাইরাসের দৈনিক শনাক্ত দুই হাজার ছাড়িয়েছে, পাশাপাশি মৃত্যু ও পরীক্ষার বিপরীতে পজিটিভ শনাক্তের হার বেড়েছে। এসময় ৪৪ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
এব্যাপারে, বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, জেলাগুলোতে শুধু লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। লকডাউনে বেশি বেশি টেস্ট করতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারকে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে।
সংক্রমণ চক্র ভাঙতে লকডাউন করা জেলাগুলোকে বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এসব জেলা থেকে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোন যানবাহন বাইরে আসতে দেওয়া যাবে না।”
এদিকে, মঙ্গলবারের সংখ্যাসহ দেশে প্রাণঘাতী ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১২,৯১৩ জনে উন্নীত হয়। এসময় পজিটিভিটি রেট ছিল ১২.১২ শতাংশ। গত ২৭ এপ্রিলের পর এই প্রথম ১২ শতাংশ ছাড়ালো পজিটিভ শনাক্তের হার।
এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) ১০ শতাংশের বেশি সংক্রমণ হার থাকা জেলাগুলোকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর ৫-৯ শতাংশ হার থাকা জেলাগুলোকে ‘মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ৫ শতাংশের নিচের জেলাকে ‘স্বল্প ঝুঁকির অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এ হিসাবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৩৭ শতাংশের বেশি পজিটিভ শনাক্তের হার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে খুলনা বিভাগ। গত কয়েক সপ্তাহ চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল বেশি।
মঙ্গলবারের তথ্যে, রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। রাজশাহী বিভাগে ১৬.২৬ শতাংশ পজিটিভ শনাক্তের হার ছিল। খুলনা বিভাগে ৩৭.১০% ও রংপুর বিভাগে পজিটিভিটি ছিল ২৫.৭৩ শতাংশ।
তবে রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জের পর এখন নাটোর, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। এই তিন জেলায় পর্যায়ক্রমে ১২.৫৭, ২৫.৬১ ও ১৪.০৪ শতাংশ হলো পজিটিভ শনাক্তের হার।
নাটোর ও সিংড়ায় এক সপ্তাহের লকডাউন:
বুধবার (৯ জুন) থেকে নাটোর ও সিংড়ায় এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হচ্ছে।
ভাইরাসের বিস্তার রোধেই এ দুই পৌর এলাকায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
নাটোরের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সিরাজ গত সোমবার রাতের এক ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত এ লকডাউন কার্যকর থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।