সুপ্রভাত ডেস্ক :
সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্রতটে মৃত দুটি তিমি ভেসে আসার পর চলছে তা নিয়ে নানা গবেষণা। প্রথমে এই তিমিগুলোর মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছিল মাছ শিকারীদের। আরেকদল দায়ী করেছেন পানি দূষণকে। তবে শেষমেষ মৎস্য গবেষকদের গবেষণায় উঠে এলো নতুন তথ্য। তাদের ধারণা তিমি দুটি ছিল দম্পতি। পুরুষ তিমিটি কোনো বড় জাহাজের আঘাতে মারা যায়। আর সঙ্গীর মৃত্যু শোক মেনে নিতে না পেরে স্ত্রী তিমিটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
তিমি অনুভূতি ও বুদ্ধি সম্পন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী। জোড় বেঁধে সঙ্গী হয়ে চলতে পছন্দ করে তিমি। নারী-পুরুষ একজন আরেকজনকে সহজে ছেড়ে যায় না। আহত হলে অন্যজন তাকে সার্বিক সহযোগিতা দেয় সারাক্ষণ। এটা তিমির সহজাত প্রবৃত্তি। তবে একজন মারা গেলে অন্যজন আত্মহত্যা করে কি-না তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো অমীমাংসিত বিষয়। আবার দলনেতা মারা গেলেও দলবেঁধে সবাই আত্মহত্যা করে। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন এসেছে নিশ্চয় যে, তিনি আত্মহত্যা করে কীভাবে?
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ঘটনাটি। সেখানে বলা হয় ডলফিন, তিমি বা অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর শ্বাস নেয়ার জন্য ওপরে ওঠে আসে। আবার শিকারের জন্য তারা সাগরের অনেক গভীরে চলে যায়। এমনকি তারা এক কিলোমিটার নিচে যেয়েও শিকার ধরে আনতে পারে। কিন্তু ভারসাম্য বিঘিœত হলে বা যথাযথভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে ব্যর্থ হলে তিমিরা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় তারা জোয়ারের সঙ্গে সৈকতের দিকে আসতে থাকে এবং সৈকতে এসে আটকা পড়ে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পড়ে। অসুস্থতার কারণে শ্বাস গ্রহণে বাধা পেয়েও তিমির মৃত্যু হয়। বিশ্বব্যাপী তিমি মৃত্যুর অর্ধেক কারণ সৈকতমুখী যাত্রা করা।
তিমির আত্মহত্যার এই পরিভাষাটি ২ হাজার বছরের পুরাতন। সেই এরিস্টটলের আমল থেকে। ২০১৫ সালে বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ চিলির পাতাগোনিয়াতে ৩৩৭টি মৃত তিমি পান। যা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো তিমিদের সবচেয়ে বড় আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও কয়েক বছর আগে নিউজিল্যান্ডে এক দিনে প্রায় ৩০০ তিমি আত্মহত্যা করেছিল। এরা সমুদ্রতটে আসার পর স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক চেষ্টা করেও এদের সমুদ্রে পাঠাতে পারেনি।
ভারতের তামিলনাড়ুতে কয়েক বছর আগে প্রায় ১০০ তিমি তীরে এসে আটকে পড়েছিল। জেলেরা অনেক কষ্টে ঠেলে সমুদ্রে পাঠালেও তারা আবার ফিরে আসে। রাতে সমুদ্রে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসার পর সকালে দেখা যায় সবগুলো আবার ফিরে এসে মরে পড়ে আছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, কোনো তিমি যদি তীরে এসে আটকে যায়। তখন তারা সমুদ্রে সিগন্যাল পাঠায়। তাকে বাঁচাতে তখন ঝাকে ঝাকে তিমি এসে নিজেরাও আটকে যায়। জেলেরা কিংবা স্থানীয় মানুষেরা তাদের সমুদ্রে পাঠানোর চেষ্টা করলেও সঙ্গীকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বারবার তীরে ফিরে আসতে থাকে। আর এখানে আটকে গিয়ে মারা যায় বেশিরভাগ তিমিই। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।
ফিচার দেউড়ি