রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে অষ্টাদশ শতকে নির্মিত চট্টগ্রামের মিরসরাই ‘জমিদার প্রসাদ’। দূর থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই এটি কোন জমিদার প্রসাদ। দেখলে মনে হবে মনোরম পরিবেশে সবুজে ঘেরা যেন এক বাগানবাড়ি। কিন্তু কাছে গেলেই ভাঙ্গবে সে ভুল। জমিদার প্রাসাদের পুরনো ইটের দেয়ালে রকমারি আগাছা। থরে থরে সাজানো ঝুঁকিপূর্ণ ঘরের ভেতর ঝোঁপঝাড়। আর সেখানটার পুরোটাই এখন পাখি ও পোকামাকড়ের দখলে। একসময়কার প্রভাবশালী জমিদার শেখ ওয়াসিল চৌধুরীর নির্মিত প্রাসাদটি এখন জরাজীর্ণ ও বিলুপ্তির পথে প্রায়। জমিদারহীন এ জমিদার প্রাসাদটির ভেতরের পরিবেশ অনেকটাই ভুতুড়ে। তাই সরকারি উদ্যোগে প্রাসাদটি সংরক্ষণের দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ ‘জমিদার প্রাসাদটি’। অট্টালিকার গায়ে জমিদারি বেশভূষা থাকলেও নেই শুধু জমিদার। জানালা ও দরজার ফ্রেম থাকলেও নেই কোনো কপাট। প্রবেশমুখে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রসাদের অনেক স্থানের ইট, দরজা-জানালা ও অনেক প্রতœতাত্ত্বিক সম্পদের কিছুই নেই। অষ্টাদশ শতকের আগে তৈরি করা জমিদার বাড়ি নির্মাণ করতে এর ছাদে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার গার্ডার। ইট, সুরকি আর রড দিয়ে নিপুণ শৈলীর গাঁথুনির এ দ্বিতল ভবন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি ঘরের ভেতর ও ছাদে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক নিদর্শন। বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা দেখতে আসেন এ জমিদার বাড়ি। তবে এলাকার প্রবীণরা বলছেন, জমিদার বাড়িটি এখন আর আগের মতো নেই। বাড়িটি তার রূপ ও জৌলুস দুটোই হারিয়ে ফেলেছে। আর এটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
স্থানীয়রা জানান, সরকারিভাবে এটি সংরক্ষণ করলে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতো। পাশাপাশি রক্ষা পেত জমিদার প্রাসাদটি।
শেখ ওয়াসিল চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার দুই সন্তান ওলি আহমেদ এবং মকবুল আহমেদ জমিদারির দায়িত্ব ভার নেন। তাদের মৃত্যুর পরবর্তী সময় সন্তানরা জমিদারির দায়িত্ব নিলে একে অন্যের ওপর বিভিন্ন অভিযোগ এনে নিজেদের মাঝে বিভাজন তৈরি করেন। তখন থেকে শুরু হয় জমিদারির পতন।
শেখ ওয়াসিল চৌধুরীর বংশধর শোয়েব আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা এখানে বসে জমিদারি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ১৯৬২ এবং ১৯৬৩ সালে অসংখ্য গুণী লোক আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, মঘাদিয়া জমিদার বাড়ির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিষয়ে জেনে প্রতœতাত্ত্বিক অধিদফতরের সাথে আলাপ বরে ভবনটি সংস্কারের বিষয়ে কথা বলবো। তবে জমিদারের বংশধররা বেঁচে আছে। তাই তাদেরও উচিত এটি সংরক্ষণে এগিয়ে আসা।