সুপ্রভাত ডেস্ক »
কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। এতে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
বিমানবন্দরের অ্যাবি গেট যেখানে মার্কিন এবং ব্রিটিশ সৈন্যরা অবস্থান নিয়ে হাজার হাজার মানুষকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল তার ঠিক বাইরে এই বিস্ফোরণ ঘটে।
পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেছেন যে বেশ ক’জন এতে নিহত হয়েছে।
তবে তালেবান দাবি করছে, বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে বলে তালেবানের একজন কর্মকর্তা বলছেন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র বলছেন, নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ বেশ কিছু বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।
একটি ‘জটিল হামলা’র জেরে এসব প্রাণহানী ঘটেছে বলে তিনি বলছেন। এখন পর্যন্ত কেউ এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিককে জানিয়েছেন, যে বোমাটি ফেটেছে তা ছিল ‘খুবই শক্তিশালী।’
রয়টার্স বার্তা সংস্থা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে তাতে এই লোকটি বলছে, বিস্ফোরণের সময় সেখানে অন্তত চারশো থেকে পাঁচশো লোক উপস্থিত ছিল।
নিহতদের মধ্যে ‘বিদেশি সৈন্য’ রয়েছে বলে তিনি জানান।
“আমরা স্ট্রেচারে করে আহতদের সরিয়ে নেই … রক্তে আমার পোশাক ভিজে গিয়েছিল।”
কাবুল থেকে বিবিসি সংবাদদাতা সেকান্দার কিরমানি খবর দিচ্ছেন, বিস্ফোরণের পর যেসব ভিডিও এবং ছবি প্রকাশিত হয়েছে তাতে লাশের ওপর লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি মনে করছেন।
অকুস্থল থেকে বহু আহত ব্যক্তিদের সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
আফগান টিভি টোলো নিউজে আহতদের হাসপাতালে নেয়া ছবি প্রচার হয়েছে।
বিবিসি সংবাদদাতা জনাথান বিইল জানাচ্ছেন, প্রথম হামলার পর দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই বিস্ফোরণ সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর দিচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে তার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন তখন তাকে কাবুল বিমানবন্দরের এই হামলা সম্পর্কে খবর দেয়া হয়।
এর আগে বৃহষ্পতিবার পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলো কাবুলের বিমান বন্দরে সন্ত্রাসী আক্রমণ সতর্ক করে দিয়েছে এবং বলেছে যারা উদ্ধার পাবার আশায় সেখানে সমবেত হয়েছে তারা যেন নিরাপদ স্থানে সরে যায়। কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, “কাবুল বিমান বন্দরের ফটকের বাইরে নিরাপত্তার বিষয়ে হুমকির কারণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিমান বন্দরের দিকে আসতে নিষেধ করছি এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্দিষ্ট কোন প্রতিনিধির কাছ থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বিমান বন্দরের ফটকের কাছেও আসতে নিষেধ করছি”। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ যুক্তরাষ্ট্রের যে সব নাগরিক আবেই গেইট, ইস্ট গেইট এবং নর্থ গেইটে রয়েছেন তারা যেন অবিলম্বে সে সব স্থান ত্যাগ করেন”।
ব্রিটেনের সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী জেমস হিপে বিবিসি রেডিওকে বলেন, “আসন্ন আক্রমণ সম্পর্কে এখন অত্যন্ত… অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য খবর রয়েছে”। অষ্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বানিজ্য বিভাগও , “অত্যন্ত বড় ধরণের সন্ত্রাসী হামলার চলমান হুমকির কথা উল্লেখ করেছে এবং বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার দি ক্রু বলেন সম্ভাব্য হামলা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সুত্র থেকে জানার পর তার সরকার উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার এ কথা আবারও বলেন যে আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য হুমকির আশংকা করছে। পররাষ্ট্র দপ্তরে ব্লিংকেন বলেন , “এই জটিলতা এবং এই প্রচেষ্টার পেছনে যে বিপদ রয়েছে তাকে বাড়িয়ে বলা যায় না”। তিনি বলেন, “আমরা তালিবান নিয়ন্ত্রিত শহরে এবং দেশে এক বৈরি পরিবেশে কাজ করছি যেখানে আইসিস-কে’র আক্রমণের বাস্তব আশংকা রয়েছে। আমরা সব ধরণের সাধানতা অবলম্বন করছি, তবে এটা অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়”।
যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকানদের , যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাশিন্দাদের , মিত্রদের এবং ঝুঁকির মুখে পড়া অন্যান্য আফগানদের উদ্ধার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় প্রকাশ করেছে এবং তার জন্য প্রয়োজনবোধে এ মাসের শেষে সময়সীমা যদি অতিক্রম করে তা হ’লে তাই করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্লিংকেন বলেন, “৩১ শে আগস্টের পরও আমেরিকানদের ফিরিয়ে আনা এবং যে সব আফগান সে দেশ ত্যাগ করতে চায়, তাদের জন্য কোন সময়সীমা নেই। তাদেরকে ভুলে যাওয়া হবে না”।
বুধবার হোয়াইট হাউজ বলেছে যে ১৪ই আগস্টের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক এবং সংযুক্ত ফ্লাইটগুলোতে ৮২.৩০০ জনকে হয় উদ্ধার করেছে নয়ত উদ্ধার পেতে সহায়তা করেছে।
সূত্র : বিবিসি ও ভয়েস অফ আমেরিকা