সুপ্রভাত ডেস্ক :
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় করতে নাভিঃশ্বাস, সেখানে জাপানে বেকার বসে থেকে আয় করা যায় এর চেয়ে দশগুণ। ভাবছেন এ আবার কেমন কথা? কাজ না করে কীভাবে টাকা কামানো যায়?
জাপানের কিছু মানুষ আছে, তারা যে কাজ করে সেগুলো আপনার কাছে আদৌ কোনো কাজ বলে মনে নাও হতে পারে। আজ তেমনেই এক অদ্ভূত কাজের কথা জানাবো। যা জানলে আপনি বলবেন টাকা আয় করা সত্যিই এতোটাও সহজ হতে পারে!
জাপানের নারীরা চাইলেই হ্যান্ডসাম পুরুষদেরকে ভাড়া করতে পারে। ভাবছেন হয়ত কোনো খারাপ প্রবৃত্তির কারণে নারীরা এ কাজ করে। বিষয়টি আসলে তা নয়। শুধু কান্না করার জন্যই সে পুরুষটিকে ভাড়া করে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি সত্যি।
নারীরা টাকা দিয়ে হ্যান্ডসাম পুরুষদেরকে বাসায় ডাকে কাঁদানোর জন্য। নিশ্চয় ভাবছেন, কেন? নারীরা কান্না করার জন্য পুরুষদেরকে ভাড়া করেন। যাতে সেই পুরুষটি নারীটিকে সান্ত¦না দেয় এবং তার শোকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে।
এসময় নারীরা তাদের মনের কষ্টগুলোর কথা পুরুষটিকে জানায় ও কান্নায় ভেঙে পড়ে। আর ছেলেটিও মেয়েটির চোখ মুছে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত¦না দেয়। আর নিজেও কান্নার অভিনয় করে। মাত্র দুই ঘণ্টা কান্না করার জন্য এসব ছেলেরা সাড়ে চার হাজার টাকা ফি নেয়। কান্না করে যদি এতো টাকা আয় করা যায় তবে মন্দ কী?
এই পেশার নাম আইকেমেসো দানশি (স্বেচ্ছায় কান্না করা)। ৩৮টি দেশের মধ্যে জাপানই একমাত্র দেশ যেখানে মানুষ সামাজিক কিছু বাধা-বিপত্তির জন্য প্রাণ খুলে কান্নাও করতে পারে না। কারণ তারা এতোটাই পরিশ্রম আর কাজে ব্যস্ত থাকে যে আবেগে কান্না করার সময়টুকুও পায় না।
কান্না করলে মানুষের মন অনেক হালকা হয়। হাসির যেমন উপকারিতা রয়েছে, কান্না করারও শারীরিক অনেক উপকারিতা রয়েছে। আর জাপানি নারীরা দীর্ঘমেয়াদি ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে কান্না করার জন্য ‘হ্যান্ডসাম উইপিং বয়’ ভাড়া নিয়ে থাকেন।
এই কাজে বর্তমানে অনেক পুরুষেরাও অবদান রাখছে। কারণ সামান্য কয়েক ঘণ্টার জন্য যদি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যায় আবার নারীদেরকে জড়িয়ে ধরা যায় তবে মন্দ কী?
বর্তমানে জাপানে ‘হ্যান্ডসাম উইপিং বয়’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখান থেকে নারীরা পুরুষদেরকে কান্নার জন্য ভাড়া করতে পারে। এই প্রতিষ্ঠানেই ওইসব পুরুষদেরকে ওয়ার্কশপের মাধ্যমে এ কাজ শেখানো হয়। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হিরোকি টেরাই। তার মতে, বর্তমানে সবাই ব্যস্ত জীবন পার করে। সবার জীবনেই দুঃখ কষ্ট থাকে। তবে নারীরা বেশি আবেগপ্রবণ এজন্যই তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আমাদের এই প্রয়াস।
এই পেশায় কর্মরত ইয়াসুই নামক এক ব্যক্তি জানান, ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরাই উইপিং বয় হিসেবে কাজ করে। নারীরা সবসময় চাই, তাদের দুঃখের সময় যেন পুরুষ সঙ্গী বুকে আগলে নিয়ে সান্তনা দেয়। আমরা সেসব নারীদেরকেই সাহায্য করি যারা দুঃখের সময় পাশে পুরুষ সঙ্গীকে পায় না।
তিনি আরো বলেন, জাপানিরা কখনো মানুষের সামনে কান্না করতে পারে না। এটা আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ যে আমরা কান্না করতে পারব না। আর এ কারণে সবাই কান্না করতে ভুলেই গেছি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে যদি কান্না না করা যায় তবে স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়। এ কারণেই উইপিং বয়’রা নারীদের কান্না করতে সাহায্য করে।
‘হ্যান্ডসাম উইপিং বয়’ কোম্পানি তাদের ওয়ার্কশপে এমন নারীদেরকে ডেকে বিভিন্ন দুঃখের সিনেমা দেখিয়েও কান্না করান। আবার কেউ কেউ যদি একা কান্না করতে চান তবে নিজ বাসাতেও উইপিং বয়কে ডেকে নেন। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।
ফিচার দেউড়ি