ভূঁইয়া নজরুল >>
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধ হচ্ছে কাজীর দেউড়িতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সামনে জিয়া শিশু পার্কের স্থানে। একইসাথে বিদ্যমান পার্কটিকে অন্যত্র স্থানান্তর এবং জিয়া স্মৃতি যাদুঘরকে মুুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তবে সার্কিট হাউজের যে কক্ষে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল তা অক্ষত রাখা হবে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাছে এমনই সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এর আগে এই পার্কটিতে নতুন করে বরাদ্দ না দিয়ে এই স্থানে উন্মুক্ত সবুজ চত্বর রাখার দাবিতে চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকাগুলো ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ‘চসিকের কাছে বাণিজ্যিক স্বার্থই বড়!’ শীর্ষক অভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা যে স্থানগুলোতে আত্মসমর্পণ করেছে সেসব স্থানগুলো জিয়াউর রহমান পার্ক করে নষ্ট করে দিয়েছেন। ঢাকায় যেমন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে করেছেন তেমনিভাবে চট্টগ্রামে সার্কিট হাউজের সামনের জায়গাটি করেছেন। আমরা এসব স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ম্যুরাল ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে চাই।’
কিন্তু চট্টগ্রামের সেই স্থানে কি করবেন জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, ‘আমাদের চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেছেন বর্তমান শিশু পার্কটির জায়গায় পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করেছিল। তাই এই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ এবং বিভিন্ন ম্যুরাল নির্মাণের। আমরা সংসদীয় কমিটি তা গ্রহণ করেছি এবং এই স্থান থেকে পার্কটিকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে সুপারিশ করেছি। একইসাথে জিয়াউর রহমানকে যে কক্ষে হত্যা করা হয়েছিল সেই কক্ষটি ছাড়া পুরো সার্কিট হাউসকে যাদুঘর তৈরি করার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।’
সুপারিশ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদের কাছে। তিনি বলেন, ‘সার্কিট হাউজের সামনের এই জায়গাটি অনেক স্মৃতি বিজরিত জায়গা। এই জায়গায় ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করেছিল। তাই এটি শুধু একটি খালি জায়গা নয়, বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির একটি অন্যতম স্থান। বিএনপি সরকারের সময়ে এই স্থানে পার্ক নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে সেই স্মৃতি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে।’
এই পার্কটি ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে প্রতিমাসে ৭৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তা ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৫ বছরের জন্য লিজ দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবারো ১৫ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে একই প্রতিষ্ঠানকে। প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা ভাড়া এবং প্রতি পাঁচ বছর পর পর তা রিভিউও করা হবে। নতুন চুক্তি হওয়ার পর পার্কের সামনের প্রবেশ মুখ এবং ভেতরে সংস্কার কার্যক্রম করে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি।
এখন সংসদীয় কমিটির সুপারিশ ও পার্কের বরাদ্দ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশকে আমি সম্মান করি। আমার নির্বাচনী ইশতেহারেও চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কথা ছিল। এখন সংসদীয় কমিটি এই স্থানে তা নির্মাণের সুপারিশ করায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সহজ হবে।’
তিনি আরো বলেন, বিএনপি জামায়াত সরকার দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিনষ্টের জন্য এই স্থানে পার্কটিকে বরাদ্দ দিয়েছিল। এটি কোনো খোলা জায়গা নয়, মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি এখানে রয়েছে। এই স্থানেই চট্টগ্রামে প্রথম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।’
কিন্তু এই পার্কটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১৫ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে। এখন কিভাবে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ বাস্তবায়ন হবে? এই প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন,‘ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কোন ধারা ও উপধারায় তা বরাদ্দ দিয়েছে এবং কি কি শর্ত ছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। তা দেখার পর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প কে বাস্তবায়ন করবে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রকল্প নিতে পারে অথবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আমরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছি তাই তাদের পক্ষ থেকেই প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হতে পারে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে পার্ক গড়ে তোলার জন্য নতুন নতুন জায়গা পাওয়া গেলেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত স্থান নতুন আরেকটি পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি লালদীঘি ময়দানকে ছয় দফা মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এবার এই স্থানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সৌধ করা হলে তা হবে অনন্য অর্জন। চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতি সৌধ নেই।