সুপ্রভাত ডেস্ক
এক হকারকে প্রকাশ্যে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে আবার আলোচনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম, যার বিরুদ্ধে পাহাড়কাটা, সরকারি জায়গা দখলসহ নানা অভিযোগ আছে। কাউন্সিলর জসিমের হকার পেটানোর একটি ভিডিও গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে মারধরের শিকার হকার অপু প্রধান বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনায় নগরীর আকবর শাহ থানায় মামলা করেন। মামলায় কাউন্সিলর জসিম ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়।
আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তের পর বোঝা যাবে ঘটনা সত্যি কিনা।’
হকার অপু প্রধান আকবর শাহ ও পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনীর এইচ ব্লক মোড়ে (হাজী ঘোনা এলাকা) ক্রোকারিজের মালামাল বিক্রি করেন।
ইন্টারনেটে যে ভিডিওটি ছড়িয়েছে, তাতে দেখা গেছে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এক হকারের জামার কলার ধরে প্রকাশ্যে চড়থাপ্পড় ও লাথি মারছেন। পরে ওই রাস্তা দিয়ে পুলিশের একটি টহল গাড়ি যাওয়ার সময় তাদেরকে ডেকে ওই হকারকে পুলিশের হাতে তুলে দেন জসিম। ভিডিওতে পুলিশের সামনেও ওই হকারকে লাথি মারতে দেখা গেছে কাউন্সিলরকে। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময় জসিম ওই হকারকে বলছিলেন- ‘তোর বাড়ি কোথায়? তোকে জুয়া বসানোর কে পারমিশন দিছে?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই হকারকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময় কাউন্সিলর নিজেই মামলা করবেন বলে জানালেও পরে আর করেননি। পরে পুলিশ ওই হকারকে ছেড়ে দেয়।
মারধরের শিকার অপু প্রধানের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, বুধবার রাস্তার পাশে মালামাল বিক্রির সময় বিকাল ৫টার দিকে কাউন্সিলর জসিম ‘তুই নাকি লটারি দিয়েছিস’ এ কথা বলে কোনো উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে এলাপাতাড়ি, চড়থাপ্পড়, কিলঘুষি মারতে থাকেন এবং চিৎকার করে গালিগালাজ করে বলতে থাকেন- কার পারমিশন নিয়ে আমার এলাকায় ব্যবসা করতেছোস?
বাদির অভিযোগ, ব্যবসা করতে হলে তার অনুমতি লাগবে এবং ‘চাঁদা ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না’ বলেও জসিম হুমকি দেন। খবর বিডিনিউজ।
এ বিষয়ে জানতে কাউন্সলর জসিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সে (অপু প্রধান) কোনো হকার না। জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করছে। আমার বাসার সামনে জুয়ার বোর্ড চলছিল। ওখানে হকার বসার কোনো স্থান নেই।‘তাকে পাঁচ দিন ধরে বলার পরও ওঠেনি। তাই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’ এই কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগে সম্প্রতি একটি মামলা হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল আকবর শাহ হাউজিংয়ের কাছে বেলতলী ঘোনায় পাহাড় কেটে দেয়াল তৈরির সময় মাটিচাপায় এক শ্রমিক নিহত ও দুইজন আহত হন। ওই ঘটনায় ১১ এপ্রিল রাতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে করা মামলায় জসিমকেও আসামি করা হয়।
এর আগে নগরীর আকবর শাহ এলাকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি দল পাহাড় কাটা ও খাল ভরাটের ঘটনা পরিদর্শনে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। সংগঠনটির অভিযোগ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন বাধার সৃষ্টি করে এবং আক্রমণাত্মক অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে।
পরে অবশ্য কাউন্সিলর জসিম এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।