নিজস্ব প্রতিবেদক »
আগুনে পোড়া এস আলম গ্রুপের গুদামের অপরিশোধিত চিনির গলিত বর্জ্য সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে মিশছে। যার ফলে নদীর বিশাল এলাকাজুড়ে পোড়া তেল ও ফেনার মতো ভাসছে চিনির বর্জ্য। এতে দূষিত হচ্ছে পানি। মারা যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ ও ছোট জলজ প্রাণী। এসব বর্জ্যের কারণে পানিতে অক্সিজেনের শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে জানান নদী গবেষক মঞ্জুরুল কিবরিয়া।
এদিকে পুড়ে যাওয়া চিনির বর্জ্য প্রথমে নালার মাধ্যমে অপসারণ করা হলেও এখন ট্রাকে করে জমিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে বলে জানান মিলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার হাসমত আলী।
বুধবার বিকেলে সরেজমিনে ইছানগর এলাকার মিলের পাশে বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, চিনি মিলের পোড়া অপরিশোধিত চিনির বর্জ্য নালার মাধ্যমে সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। যার কারণে নদীর প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে গেছে। পাশাপাশি মারা যাচ্ছে মাছ, চিংড়ি-কাঁকড়াসহ ছোট জলজ প্রাণী। স্থানীয় লোকজন নদী থেকে ভাসমান মাছগুলো জাল এবং হাত দিয়ে ধরে নিচ্ছে। এ ছাড়া চলাচলের রাস্তাসহ মিলের আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পোড়া চিনির গলিত বর্জ্য।
স্থানীয়রা জানান, এসব বর্জ্যের কারণে গতকাল সকাল থেকে দেখা যায় নদীর পানির রং পরিবর্তন হয়েছে। অনেক মাছ মরে গেছে। অনেক মাছ নদীর কিনারায় এসে ভাসছিলো। স্থানীয়রা তা জাল দিয়ে তুলে নিচ্ছে।
মাছ ধরতে আসা রাকিবুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সকালে নদীতে মাছ ভেসে আসার খবরে এখানে এসেছি। এখানে কেউ জাল দিয়ে আবার কেউ হাত দিয়ে মাছ ধরছে। চিনির বর্জ্যে নদীর পানির রং নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক মাছ এরই মধ্যেই মারা গেছে। কিছু দুর্বল হয়ে জালে আসছে। আমিও কয়েকটা মাছ পেয়েছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, নদীতে প্রভাব ফেলার বিষয়টি নির্ভর করে অপরিশোধিত চিনির পরিমাণের ওপর। আর চিনির যে কাঁচামালগুলো পুড়ে গেছে তা পরিমাণে কম হলে নদীতে পড়লেও তেমন একটা ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। তবে একটি বিষয় হচ্ছে কারখানা বা গুদামে নানা রকম দাহ্য পদার্থ থাকে। এগুলো মিশ্রিত হয়ে নদীতে পড়লে সেখানে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
জানা যায়, এস আলম সুগার মিলে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে গেছে।
নদী গবেষক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, পুড়ে যাওয়া চিনি বিষাক্ত কেমিক্যালে রূপ নিয়েছে। এতে পানির কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে পানিতে অক্সিজেনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিতে থাকা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে নদীর মাছ মারা যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, এখানে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ (র’ সুগার) পুড়ে গেছে। সাথে পুড়েছে কারখানার সব কিছু যার মধ্যে দাহ্য পদার্থও ছিল। এসব মিশ্রিত পানি নদীতে পড়ে দূষণ হচ্ছে। নদীর পানি পরীক্ষা করার পর দূষণের পরিমাণ ও প্রভাব বলা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস আলম সুগার মিলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার হাসমত আলী বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় পুড়ে যাওয়া চিনি নালার মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছিল। এখন আমরা ট্রাকে করে জমিতে পুঁতে ফেলছি।
অগ্নিকা-ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে ফেলার কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তদন্ত পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার (৪ মার্চ) বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর এলাকার সুগার মিলটিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বুধবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মিলটির আগুন নেভানো যায়নি।